সম্প্রতি ফেসবুকে একটি প্রশ্ন ভাইরাল হয়। যেখানে এক ব্যক্তি ভুল করে মাথা ব্যাথার ওষুধ ভেবে তার বউ-এর গর্ভনিরোধক পিল খেয়ে ফেলে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এভাবে কোনো পুরুষ যদি গর্ভনিরোধক পিল খেয়ে ফেলে তাহলে কী ঘটবে?
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলোর প্রকারভেদ থেকে বোঝা যায় এর উন্নতিতে যত কাজ করা হয়েছে সবই ছিল মূলত নারীকেন্দ্রিক। তাই এর সমস্যাগুলোতেও নারীদেরই বেশি সম্মুখীন হতে হয়। নিয়ম করে প্রতিদিন একই সময় পিল খাওয়া প্রতিটি নারীর জন্যই অনেক চাপের।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি দুই ধরনের। একটি স্থায়ী আর অন্যটি অস্থায়ী। অস্থায়ী পদ্ধতি পুরুষের জন্য মূলত কনডমেই সীমাবদ্ধ। আর নারীর জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, প্রোজেস্টেরন অনলি পিল, আইইউডি, প্যাচ, ইমপ্ল্যান্ট ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি আছে। এগুলোর কোনো কোনোটি স্বল্প মেয়াদে কাজ করে, আবার কোনো কোনোটি দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল আসলে কী?
জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি হল গর্ভনিরোধের জন্য প্রযোজ্য বড়ি (মৌখিক গর্ভনিরোধক বড়ি বা OCPs নামেও পরিচিত), যেগুলিতে মহিলাজাত হরমোন যেমন-ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন অথবা দুটোই নির্দিষ্ট মাত্রায় সমন্নিত থাকে। এই বড়িগুলি প্রতি ঋতুচক্রের সময় হরমোনের মাত্রা নিপুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ওভুলেশন প্রতিরোধ করে। অর্থাৎ, এইসব বড়ি খেলে ওভিউলেশন বা ডিম্বাণু নির্গমন হয় না। ফলে গর্ভসঞ্চারের সম্ভাবনাও থাকে না।
যদি একজন পুরুষ মাত্র একটি বা দুটি জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খায়, তাহলে কিছুই হবে না। মাত্র দুটো বড়ি দিয়ে একজন পুরুষের শরীরকে ভারসাম্যহীন করে ফেলবে এমন হরমোন যথেষ্ট পরিমাণ থাকে না। তবে যদি একজন ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ধরে নিয়মিতভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণের পিল গ্রহণ করেন, তাহলে তার স্তন বড় হয়ে যেত পারে, তার অণ্ডকোষ সঙ্কুচিত হতে পারে এবং তার যৌন মিলনের ক্ষমতা এবং মুখের দাড়ির পরিমাণ কমে যেতে পারে। ইস্ট্রোজেনের উচ্চ মাত্রা বর্ধিত প্রোস্টেট এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। উল্টো দিকে, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িগুলি হার্ট অ্যাটাকের বিরুদ্ধে সুরক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে, তবে সেটা পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় ।
নিউটন বলেছিলেন, প্রতিটি ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু যেকোনো ওষুধের ক্ষেত্রে ‘সমান ও বিপরীত’ কথাটার মতো সামান্য নয় ব্যাপারগুলো। বরং প্রতিটি ওষুধেরই ক্ষেত্রবিশেষে বেশ বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। ‘ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ’ হলেও তাই জরুরি গর্ভনিরোধক পিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সুবিবেচক হতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।