বিজ্ঞানীরা শরীরে ঘামে তীব্র গন্ধ তৈরির পিছনের রহস্যজনক প্রক্রিয়াটি উন্মোচন করেছেন। ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মানব বগলে বাস করে এমন একটি নির্দিষ্ট জীবানুতে উপস্থিত একটি নির্দিষ্ট এনজাইমকে বগলের ঘামে গন্ধের উৎস শনাক্ত করেছিলেন।
এই এনজাইমকে ঘামের দুর্গন্ধের রাসায়নিক উপাদান হিসেবে প্রমাণ করার জন্য বিজ্ঞানীরা এটিকে বগলে বসবাসকারী দুর্গন্ধ তৈরি করে না এমন অণুজীব এর সাথে স্থানান্তরিত করেছিলেন এবং লক্ষ্য করেছিলেন এটি খুব খারাপ গন্ধ বের করতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মানুষ আমাদের প্রাচীন প্রাইমেট পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে গন্ধ যুক্ত জীবানু গুলো উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে।
এই দলের সিনিয়র অণুজীববিজ্ঞানী প্রফেসর গ্যাভিন থমাস বলেছেন, কীভাবে শরীরে গন্ধ তৈরি হয় তা আমরা আবিষ্কার করেছি। মানুষ সরাসরি ঘামে গন্ধের সবচেয়ে তীব্র উপাদানগুলি উৎপাদন করে না। আপত্তিকর এই গন্ধগুলি থায়োএলকোহলস হিসাবে পরিচিত, এগুলো দেহত্বকের উপরে মাইক্রোবসদের সাথে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার যুদ্ধে উপজাত হিসেবে নির্গত হয়।
ইয়র্কের গবেষণা দলটি আগে আবিস্কার করেছিলো যে, ত্বকের বেশিরভাগ জীবাণু থায়োএলকোহল তৈরি করতে পারে না। আরও পরীক্ষা করে জানা গেল যে, বগলে বাসকারী ব্যাকটেরিয়ার একটি প্রজাতি স্টেফাইলোকক্কাস হোমিনিস এর পেছনে প্রধানত অবদান রাখে। ব্যাকটেরিয়াগুলো গন্ধযুক্ত বাষ্প উৎপাদন করে যখন তারা Cys-Gly-3M3SH নামে একটি গন্ধহীন যৌগ গ্রহণ করে, যা বগলের ঘাম গ্রন্থি দ্বারা নির্গত হয়।
মানুষের দুই ধরনের ঘাম গ্রন্থি রয়েছে। একক্রাইন গ্রন্থিগুলো দেহের শীতল ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। অন্যদিকে, এপোক্রাইন গ্রন্থিগুলো চুলের গ্রন্থিকোষে খোলে এবং কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় ছড়িয়ে পরে। ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ জার্নালে প্রকাশিত ইয়র্কের গবেষণাদলের বর্ণনা অনুযায়ী, স্টেফাইলোকক্কাস হোমিনিসের অভ্যন্তরে উৎপাদিত থায়োএলকোহল তৈরি হয় এমন একটি এনজাইম থেকে যা অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থি দ্বারা নির্গত Cys-Gly-3M3SH কে তীব্র থায়োএলকোহল 3M3SH এ রুপান্তরিত করে।
থমাস বলেছিলেন, ব্যাকটেরিয়াগুলি এনজাইমটি থেকে কিছুটা খায় বাকিটা তারা থুতু হিসেবে ফেলে দেয় যা আমাদের শরীরে গন্ধ উৎপাদনকারী অণু হিসাবে স্বীকৃত অণুগুলির মধ্যে একটি। গবেষকরা এই এনজাইমটি স্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াসে স্থানান্তরিত করে এর ভূমিকাটি নিশ্চিত করেছেন যে এই এনজাইমটি একটি সাধারন যৌগ যা শরীরের গন্ধে ভূমিকা রাখে না যতক্ষণ না কোনো ব্যাকটেরিয়া তা গ্রহণ করছে।
থমাস বলেছিলেন, “জিনটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরে আমরা স্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াস পেয়েছিলাম যা শরীরে গন্ধ তৈরি করে।” আমাদের নাক এই থায়োএলকোহলগুলি সনাক্তকরণে অত্যন্ত কার্যকর ভুমিকা পালন করে থাকে। এরা চিটচিটে, পিঁয়াজের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধের মতো বৈশিষ্টযুক্ত, যা সহজেই চেনা যায়।
গবেষণা পরবর্তী মিশেল রুডেন এবং অন্যান্যরা স্টেফাইলোকক্কাসের কয়েক ডজন প্রজাতির মধ্যে জিনগত সম্পর্কের দিকে নজর দিয়েছিলেন। বিশ্লেষণটি থেকে দেখা যায় যে, প্রায় ৬০০ বছর পূর্বে কিছু মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে এনজাইমটি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলো। এপ্রোক্রাইন গ্রন্থি বয়ঃসন্ধির সময় থেকে শরীরের গন্ধ তৈরির যৌগগুলো নির্গত করে। থমাস বলেন, মানুষের বিকাশকালেও এটি ছিলো। মানুষের বিবর্তনে এগুলি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তা কল্পনা করা অসম্ভব নয়। আমরা ডিওডোরান্টস এবং অ্যান্টিপারস্পপিরেন্টগুলি ব্যবহার শুরু করার আগে গত ৫০ থেকে ১০০ বছরে অবশ্যই প্রত্যেকে গন্ধ সমস্যায় ভুগত।
রিয়া আক্তার/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ দ্যা গার্ডিয়ান