জন্মের সময় প্রতিটি মানবসন্তান আঙ্গুলে পূর্ণাঙ্গ নখ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এই নখ থাকে মৃত্যু পর্যন্ত। মৃত্যু-র পর মূহুর্ত পর্যন্ত এই নখ গুলো বাড়ে। আমরা এই জীবনে শতশত ঘণ্টা ব্যয় করি নখের কর্তন, ছাঁটাই, এর মধ্যে নকশা করা নিয়ে। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি কেন নখ ক্রমাগত বৃদ্ধি পায় এবং এর গুরুত্ব কী?

সাধারণভাবে আমরা জানি নখ গঠিত হয় এক ধরনের মৃত,কঠিন পদার্থ দ্বারা যার নাম কেরাটিন। কেরাটিন মূলত এক ধরনের গাঠনিক প্রোটিন। চুলের গঠনেও এই কেরাটিন রয়েছে। তবে নখ মৃত পদার্থে গঠিত হলেও মূলত জীবিত কোষ হিসেবেই নখের যাত্রা শুরু।
প্রথমে নখের গঠনের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। আঙ্গুলের শীর্ষে অর্ধস্বচ্ছ যে কঠিন অংশটিকে রয়েছে তার পুরো নাম Nail Plate. পুরো Nail Plate যে নরম, পাতলা টিস্যুগুচ্ছের উপর অবস্থিত তার নাম Nail Bed. নখকে ঘিরে রাখা চামড়ার মোটাস্তর Eponychium. Nail Plate এর দুই পাশ ভাঁজ হয়ে Eponychium এর সাথে সংযুক্ত থাকে। এই অংশকে বলা হয় Nail Groove. বড় নখে Nail Bed এর নিচের দিকে অর্ধগোলাকৃতির সাদা ছোট্ট একটি অংশ দেখা যায়। একে বলা হয় Lunula. হাতের নখগুলোকে Finger Nail এবং পায়ের নখগুলোকে বলা হয় Toe Nail.

নখের একমাত্র জীবিত অংশকে বলা হয় ম্যাট্রিক্স। এটি নখের গোড়ার টিস্যু। ত্বকের নিচে নখের গোড়ায় থাকা এই কোষসমূহ ক্রমাগত বিভাজনের মাধ্যমে কেরাটিন তৈরি করে। কেরাটিন কোষের সমষ্টিকে ‘Root’ ও বলা হয়। ম্যাট্রিক্স রক্তনালিকার সাথে যুক্ত হয়ে নখের গোড়ায় প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়। এতে নবনির্মিত কোষসমূহ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে জায়গা দখলের জন্য পুরাতন কোষগুলোকে সামনে ধাক্কা দিতে থাকে।
‘রুট‘ নামক স্থানে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় এবং নব্য উৎপন্ন কোষগুলোর ধাক্কায় পুরাতন কোষগুলো ধীরে ধীরে মারা যায় এবং আস্তে আস্তে বাইরের দিকে বের হয়ে আসতে থাকে। মৃত কোষগুলোর সমষ্টিই Nail Plate গঠন করে। যতক্ষণ মানুষ জীবিত থাকে অর্থাৎ দেহে পুষ্টি বহনের জৈবিক কাজগুলো চলমান ততক্ষণ নতুন কোষগুলো উৎপন্ন হতে থাকে এবং নখের দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে। জেনে রাখা ভালো, পায়ের নখের (Toe Nail) তুলনায় হাতের নখ (Finger Nail) দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

মৃত্যুর পর নখের বৃদ্ধি : আমরা জেনেছি, নখের বৃদ্ধি ঘটে মূলত দেহের জৈব রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপের জন্যে। মৃত্যু-র পর যেহেতু দেহের জৈবিক কাজগুলো বন্ধ হয়ে যায়, তাই এ সময়ে নখ বা চুল বাড়ে, এই ব্যাপারটি অসম্ভব। উল্লেখ্য, হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবার পর মুহূর্তেই মস্তিষ্ক তার কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে দেহের কেন্দ্রীয় অংশের সাথে অন্যান্য অঙ্গের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

কিন্তু দেহের জীবিত অংশগুলো কিছু সময়ের জন্য নিজেরা নিজেদের কাজ চালিয়ে যায়। সে হিসেবে নখের গোড়ায় থাকা ম্যাট্রিক্স মৃত্যুর পর কিছু নতুন কোষ তৈরি করবে। কিন্তু সে কোষ তৈরির সময় এতই অল্প এবং তৈরিকৃত কোষের সংখ্যা এতই নগণ্য যে মূল নখের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিতে তা বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলবে না। তবু্ও মৃত্যুর পর নখ বাড়ে, এটা নিয়ে যে গুজব ছড়িয়েছে তার কারণ মৃত্যু-র পর দেহপেশি সংকুচিত হতে থাকে। আঙ্গুলের পেশি সংকুচিত হয়ে গেলে দেখে মনে হয় নখের আকার বেড়েছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা নখ আগের মতোই আছে বরং নখের পাশের পেশি চুপসে গেছে।
মাসরুল আহসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
সোর্সঃ লাইভসায়েন্স
+1
+1
1
+1
+1
4
+1
+1
+1