অ্যাসপিরিনের পরিমিত মাত্রা দীর্ঘদিন ধরে কার্ডিওভাসকুলার রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অতীতের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দৈনিক অ্যাসপিরিন ব্যবহার নির্দিষ্ট জনসংখ্যার ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে। কিন্তু, এই নিয়মটিতেও ঝুঁকি রয়েছে! তাই ডাক্তাররা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে অ্যাসপিরিন এর ব্যবহার পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
ইউএস প্রিভেনটিভ সার্ভিসেস টাস্ক ফোর্স (US Preventive Services Task Force) যারা কিনা রোগ প্রতিরোধ ও প্রমাণ-ভিত্তিক ওষুধের বিষয়ে পরামর্শ দেয়, একটি খসড়া বিবৃতিতে তাদের সুপারিশগুলো জানিয়েছেন। তারা বলেন, বয়স্কদের জন্য হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে অ্যাসপিরিন এর সাহায্য আগে থেকে নেওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে, প্রাপ্তবয়স্কদের (৪০ বছর থেকে ৫৯ বছর বয়সী) জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন নেওয়া উপকারী হলেও ৬০ বছর বা তার থেকে বেশি বয়সীদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে পেট, অন্ত্র এবং মস্তিষ্কে রক্তপাতসহ গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে।
টাস্ক ফোর্সটি স্পষ্ট করে বলেছে যে, তাদের নতুন সুপারিশগুলো কেবল তাদের জন্যই প্রযোজ্য যাদের আগে কখনও হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়নি, এবং যারা ইতিমধ্যে নিয়মিত অ্যাসপিরিন গ্রহণ করছেন না। কিন্তু যদি আপনার বয়স ৬০ বা তার বেশি হয় এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের কোন ইতিহাস না থাকে, তাহলে আপনার অ্যাসপিরিন নেওয়া শুরু করা উচিত নয়।
যখন আমাদের ধমনীতে রক্ত সরবরাহ আটকে যায় এবং হার্টে রক্তের গুরুত্বপূর্ণ প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, তখন হার্ট অ্যাটাক হয়। স্ট্রোক মস্তিষ্কে রক্তের প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো হৃদরোগ এবং প্রতি ৪টি মৃত্যুর মধ্যে ১টির জন্য দায়ী এই কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ।
অ্যাসপিরিন একটি অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট (Anticoagulant)। এটি এমন একটি ওষুধ, যা রক্তকে পাতলা করে এবং জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। এজন্য অনেক ডাক্তাররা অ্যাসপিরিন গ্রহণের পরামর্শ দেন। যদিও কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধে অ্যাসপিরিনের দৈনিক ডোজ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছিল ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ এর দশকের ট্রায়ালগুলোর প্রমাণের ভিত্তিতে। কিন্তু বর্তমান গবেষণাগুলো এরকম রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া সুপারিশ করার পূর্বে বিস্তর পর্যালোচনা করে।
টাস্ক ফোর্স এর একজন গবেষক সেং নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, “অ্যাসপিরিন গ্রহণকারীদের মধ্যে যারা ইতিমধ্যেই মনে করেন যে থামা উচিত, তাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা ডাক্তারের সাথে কথা না বলে অ্যাসপিরিন থামানোর পরামর্শ দিচ্ছি না, এবং যদি তারা ইতিমধ্যে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক করে থাকেন তবে তো অবশ্যই না।” এই টাস্ক ফোর্সটি অ্যাসপিরিনের ব্যবহার যেন সঠিক ভাবে হয়, এই লক্ষে্য নিয়মিত পর্যালোচনা ও গবেষণা করে যাচ্ছে।
জান্নাতুল মাওয়া/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র : Popular Science
+1
+1
2
+1
+1
+1
+1
+1