রহস্যময় এই পৃথিবীর রহস্যের শেষ নেই। কত সব আশ্চর্যজনক ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে আমাদের চারপাশে। সম্প্রতি এরকমই এক আশ্চর্যভেদ করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া এর নিউরোবায়োলজির একদল গবেষক। তাদের গবেষণা বলছে, টানা ছয় মাস রাতে ঘুমানোর আগে দুই ঘন্টা শয়নকক্ষে সুগন্ধি এর ব্যবহার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারে ২২৬ শতাংশ পর্যন্ত।
কিন্তু এই ঘটনার পিছনে আসল রহস্য কী?

দীর্ঘদিন ধরে গবেষণার পর গবেষকরা দাবি করছেন তারা ঘ্রাণ এবং স্মৃতির মধ্যে একটি দারুণ যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন। কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর এমনকি ডিমেনশিয়া বা বুদ্ধিবৈকল্যকে প্রতিরোধ করার চমৎকার একটি মাধ্যম হলো সুগন্ধি।
দীর্ঘ এই গবেষণা পরিচালনা করা হয় UCI (University of California, Irvine) এর CNLM (Center for the Neurobiology of Learning & Memory) এর মাধ্যমে। পরীক্ষা পরিচালনার জন্য ষাট থেকে পঁচাশি বছর বয়সের মাঝামাঝি এক দল নারী ও পুরুষদের নির্বাচিত করা হয় যাদের স্মৃতিশক্তি ভালো ছিল। তাদের প্রত্যেককে একটি করে ডিফিউজার (সহজে ব্যাপন করতে পারে এরকম যন্ত্র) এবং সাতটি করে কার্তুজ দেয়া হয়। যেখানে প্রত্যেকটিতে একটি করে ভিন্ন প্রাকৃতিক সুগন্ধযুক্ত তৈল ছিল। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা একটানা ছয় মাস প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর আগে দুই ঘন্টা ডিফিউজারে একটি কার্তুজ রেখে সুগন্ধি উপভোগ করেছেন।
আশ্চর্যজনকভাবে অংশগ্রহণকারী এই দলের সবার স্মৃতিশক্তি ছয় মাসে ২২৬ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। অবিশ্বাস্যযোগ্য এই ঘটনা সম্পর্কে জানার সময় সবার মাঝেই একটি প্রশ্ন চলে আসতে পারে, ২২৬ শতাংশ বুদ্ধিই যে বৃদ্ধি পেয়েছে এই পরীক্ষা কীভাবে করা হলো?
আসলে একজন ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি মূল্যায়ন করার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তা হলো “শব্দ তালিকা পরীক্ষা”। এই পরীক্ষার মাধ্যমেই গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন যে গবেষণায় অংশগ্রহণকারী এই দলের প্রত্যেকের স্মৃতিশক্তি প্রায় ২২৬ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি অংশগ্রহণকারী দলের সদস্যরা এটাও নিশ্চিত করেছেন যে তারা আগের চেয়ে আরো আরামদায়কভাবে ঘুমাতে পেরেছেন।
এবার প্রশ্ন আসতেই পারে যে কীভাবে অতিসাধারণ এই সুগন্ধি এত বড় পরিবর্তন ঘটালো?

সাধারণত মানব মস্তিষ্কের বাম অ্যানসিনেট ফ্যাসিকুলাস নামক পথটি বয়সের সাথে সাথে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে। কিন্তু গবেষণায় অংশগ্রহণকারী এই দলের সদস্যদের মস্তিষ্কের ইমেজিং করে দেখা গিয়েছে বাম অ্যানসিনেট ফ্যাসিকুলাস নামক মস্তিষ্কের পথটিতে আরো ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এই পথ মধ্যবর্তী টেম্পোরাল লোবকে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের সাথে সংযুক্ত করে। ফলে তাদের মস্তিষ্কে এই আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
অবশ্য ঘ্রাণের সাথে মস্তিষ্কের এই গভীর প্রেম নতুন নয়। বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই জানেন যে ঘ্রাণ শক্তি কমে যাওয়ার মাধ্যমে প্রায় ৭০ টিরও বেশি স্নায়বিক রোগ সম্পর্কে পূর্বাভাস পাওয়া যায়। যেমন, ডিমেনশিয়া বা বুদ্ধিবৈকল্য, পারকিনসন, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি। গত দুইবছর বিশ্বের সবাইকে ঘরবন্দি করে রাখা কোভিড-১৯ এর উপসর্গ ছিলো ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া।
গবেষকরা সাধারণ সুমিষ্টঘ্রাণের এই অসাধারণ থেরাপিকে কাজে লাগিয়ে বুদ্ধিবৈকল্যের মতো ভয়াবহ রোগকে রুখে দিতে চাচ্ছেন। তবে এই কাজ এতটা সহজও হবে না। সাধারণত ষাট বছর বয়সের পর মানুষের ঘ্রাণশক্তি ও জ্ঞান একটি পাহাড়ের মতো ধ্বসে পড়ে। আর ধ্বসে যাওয়া পাহাড় মেরামত করা সহজ নয়।

এই গবেষণার ফলাফল সামনে ডিমেনশিয়া বা বুদ্ধিবৈকল্যের মতো ভয়াবহ এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছে। তবে এই ফলাফলকে ডিমেনশিয়া রোগের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকরীভাবে প্রয়োগ করা যাবে তা নিয়েও সামনে আরো পরীক্ষা চালানো হবে।
তবে যে কেউ অন্তত গভীর ও আরামদায়ক ঘুমের জন্য চাইলেই ঘুমের পূর্বে শয়নকক্ষে সুগন্ধির ব্যবহার করতেই পারেন।
আসিফুল হাসান আসিফ / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: ডেইলিসাইন্স
+1
+1
2
+1
1
+1
+1
1
+1
+1