৩১ মে, ২০২৫ -এই দিনে সায়েন্স বী’র বিজ্ঞান পিপাসুদের মাঝে বিজ্ঞান চর্চার শিখা প্রজ্জ্বলিত রাখার সাত বছর পূর্ণ হলো।
বাংলাদেশে এমন অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন যাদের মাঝে বিজ্ঞান চর্চার ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানের যাবতীয় তথ্যাদি বেশিরভাগই ইংরেজি ভাষায় বিদ্যমান। অথচ দেশের সব শিক্ষার্থী ইংরেজিতে সমানভাবে দক্ষ নয়। এছাড়াও, এই তথ্য সহজে খুঁজে পেতে প্রয়োজন সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের দক্ষতা, যা অনেকেরই নেই। ফলে অসংখ্য বিজ্ঞানপ্রেমীর উৎসাহ মাঝপথেই থেমে যায়।
কিন্তু এভাবে বিজ্ঞান চর্চার প্রজ্জ্বলিত শিখা দমে দিতে দেয়া যায় না। আর সেই শিখা জ্বালিয়ে রাখতেই ২০১৮ সাল হতে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক STEM (Science, Technology, Engineering, Mathematics) প্ল্যাটফর্ম ‘সায়েন্স বী’। এই প্ল্যাটফর্মের মূল লক্ষ্য—বিজ্ঞানের জটিল সকল বিষয়গুলো সহজ, সাবলীল এবং মাতৃভাষা বাংলায় দেশের সকল শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণায় তাদের উৎসাহিত করা।
সায়েন্স বী এর নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের নতুন বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সহজে শিখতে সহায়তা করছে। সায়েন্স বী’র ওয়েবসাইটে চারটি বিভাগ রয়েছে:
ডেইলি বিজ্ঞান সংবাদ
“ডেইলি বিজ্ঞান সংবাদ” বাংলাদেশের প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক নিউজ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের দুনিয়ায় ঘটে চলা নিত্যদিনের খবরাখবর মাতৃভাষা বাংলাতেই পড়তে পারবে অনায়াসে। এই পর্যন্ত ৯০০+ বিজ্ঞানভিত্তিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এই প্ল্যাটফর্মটিতে এবং পাঁচ লাখেরও বেশি রেজিস্টার্ড সদস্য বিদ্যমান।
বিজ্ঞান ব্লগ
সায়েন্স বী ওয়েবসাইটের আরেকটি চমকপ্রদ অংশ হচ্ছে “বিজ্ঞান ব্লগ”। যেখানে যেকোন বয়সের শিক্ষার্থী বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে পড়ার পাশাপাশি নিজেরাও লিখতে পারবে। এই পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দ্বারা লিখিত ৬৫০+ বিজ্ঞান ব্লগ প্রকাশিত হয়েছে।
Q & A সেকশন
সায়েন্স বী’র আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হচ্ছে Q & A সেকশন যেখানে যে কেউ বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশ্ন করে এক্সপার্ট প্যানেলের কাছ থেকে উত্তর পেতে পারে। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কোয়েশ্চেন আর্কাইভ যেখানে প্রায় ৩০,০০০ এরও বেশি বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশ্ন এবং এর উত্তর বিদ্যমান।
ইবুক সেকশন
সায়েন্স বী শুধু বিজ্ঞানের গুরুগম্ভীর তথ্যকে সহজভাবে পৌঁছানোই নয়, বরং এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ইবুকও প্রকাশিত হয়েছে। ইবুক সেকশনে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো:
- মানবজাতির গ্রহণ (কমিক বুক)
- ডেডলি ক্রোনাস, একজন মানুষ (সায়েন্স ফিকশন)
- বেসিক রকেট ইঞ্জিনিয়ারিং (রকেট সায়েন্স)
- তথ্য যাচাইয়ের হাতেখড়ি (ডেটা ও তথ্য বিশ্লেষণভিত্তিক)
এই বইগুলো প্রায় তিন লাখেরও বেশি বিজ্ঞান প্রেমী পাঠকদের দ্বারা সমাদৃত হয়েছে।
সায়েন্স বী শুধুমাত্র একটি ওয়েবসাইট নয়—এটি একটি বিজ্ঞানভিত্তিক কমিউনিটি, যা শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছে শেখার অসীম সুযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায়, বিশেষ করে ফেসবুকের “বিজ্ঞান ও গবেষণা” গ্রুপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বিজ্ঞানসংক্রান্ত ছোট-বড় বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে এবং কমিউনিটি লার্নিংয়ের মাধ্যমে পরস্পর হতে শেখার সুযোগ পাচ্ছে। এর ফলে নতুন প্রজন্ম ধীরে ধীরে সমাজের গোঁড়ামি ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে আরও সচেতন হয়ে উঠছে।
লাইভ সায়েন্স ও বিজ্ঞানীদের গল্প
সায়েন্স বী’র “Live Science” প্রোগ্রামের মাধ্যমে দেশের প্রখ্যাত বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যা তরুণদের মাঝে বিজ্ঞানভিত্তিক ক্যারিয়ারের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছে। এছাড়াও, সায়েন্স বী’র ইন্টারভিউ টিমের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন গবেষক তাদের গবেষণার অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ ও অনুপ্রেরণার গল্প শেয়ার করেছেন—যা শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তব জীবনের বিজ্ঞানচর্চা বুঝতে সহায়ক হয়েছে।
বিজ্ঞান কর্মশালা: অফলাইনে সায়েন্স বী’র সক্রিয় পদচারণা
সায়েন্স বী’র কার্যক্রম শুধু অনলাইনেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং অফলাইন বিভিন্ন কার্যক্রমও পরিচালিত হয়েছে। Volunteer Opportunities এবং Humanity Worldwide এর যৌথ সহযোগিতায় সায়েন্স বী তাদের অফলাইন প্রজেক্ট “বিজ্ঞান কর্মশালা” এর আয়োজন করেছিল। যার মাধ্যমে মানিকগঞ্জ, সাভার এবং ঢাকার মতো দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৫টিরও বেশি স্কুলে সেমিনারের আয়োজন করা হয়। “বিজ্ঞান কর্মশালা” প্রজেক্টের মাধ্যমেই সায়েন্স বী সরাসরি ৫০০০ শিক্ষার্থীকে অফলাইনে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানাতে সক্ষম হয়।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও কর্মজীবনে প্রয়োজনীয় নানান দক্ষতা উন্নতির লক্ষ্যে অনলাইন সেশনের আয়োজন করে থাকে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও কর্মজীবনে প্রয়োজনীয় নানান দক্ষতা উন্নতির লক্ষ্যে অনলাইন সেশনের আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও এই পর্যন্ত সায়েন্স বী ৫০+ বিজ্ঞান শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
এই পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির সাথে সায়েন্স বী’র বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সক্রিয় বিজ্ঞান চর্চায় জড়িত রয়েছে প্রায় ১৫ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী।
সায়েন্স বী নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে “কালের কন্ঠ”, “ BBC বাংলা”, “The Daily Star”, “Dhaka Tribune”, “ The Business Standard”, “দৈনিক ইত্তেফাক”, “সমকাল” এর মতো বেশকিছু মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতেও।
সায়েন্স বী’র অর্জন
এই সাত বছরের পথচলায় বহু কৃতিত্বের অংশীদারও হয়েছে সায়েন্স বী। ২০২১ সালে করোনা মহামারী চলাকালীন সময়েও বিজ্ঞান চর্চা ধরে রাখার মাধ্যমে সমাজে সবার মাঝে সচেতনতা তৈরি করার স্বীকৃতিস্বরূপ BYLC Volunteer Award অর্জন করে।
একই বছরে বাংলাদেশে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এ অবদান রাখার কারণে সায়েন্স বী’র নির্মাতা মবিন সিকদার IVD Volunteer Award এবং সমাজে পরিবর্তন আনার স্বীকৃতিস্বরূপ “Young Global Changemakers Award” অর্জন করেন।
একই বছরে যুবকদের মাঝে উদ্যোক্তা মনোভাব এবং দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিচালিত অর্গানাইজেশন Youth School for Social Entrepreneurs (YSSE) দ্বারা আয়োজিত হয় “Global Education Summit-2021”। এই সামিটে ৪০টিরও বেশি দেশ হতে ২০০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয় এবং সায়েন্স বী প্রথম স্থান অর্জন করে।
২০২৩ সালে সায়েন্স বী’র নির্মাতা মবিন সিকদার অনলাইনে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠার কারণে ব্রিটিশ রয়েল ফ্যামিলির পক্ষ হতে “The Diana Award” এ ভূষিত হন। এই সম্মানজনক অ্যাওয়ার্ড মূলত ৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী সামাজিক উদ্যোক্তাদের দেয়া হয়।
একই বছরে বাংলাদেশের মধ্যে শুধুমাত্র সায়েন্স বী WSA Young Innovators Award এর জন্য শর্ট লিস্টেড হয়। WSA Young Innovators Award হলো ২৬ বছর বয়সের নিচে তরুণদের জন্য একটি বিশেষ স্বীকৃতি, যারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) ব্যবহার করে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জনে ভূমিকা রাখছে।
একইসাথে, HolonIQ কর্তৃক প্রকাশিত ২০২৩ সালের দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধিক সম্ভাবনাময় ১০০টি Edtech প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক তালিকাতে স্থান অর্জন করেছিল সায়েন্স বী, যা প্রতিষ্ঠানটির সম্ভাবনাময়তা ও প্রভাবশালী কার্যক্রমের একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির স্মারক বহন করে।
২০২৪ সাল ছিল সায়েন্স বী’র জন্য এক অপার সম্ভাবনার দ্বার। কেননা এই বছরেই YouthCo:lab springboard প্রোগ্রামে বাংলাদেশের শীর্ষ নয়টি Edtech স্টার্টআপের মাঝে স্থান অর্জন করেছিল সায়েন্স বী।
এছাড়াও ফিনল্যান্ড-ভিত্তিক বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান HundrED কর্তৃক সায়েন্স বী-কে বাংলাদেশের শীর্ষ ১৫টি Edtech স্টার্টআপ এর মাঝে অন্যতম হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল।
একই বছরে সায়েন্স বী SIMcubator Bangladesh এর বিজয়ী ঘোষিত হয়। SIMcubator হলো একটি শিক্ষার্থী-নির্ভর প্রোগ্রাম, যা সুইজারল্যান্ডের University of St. Gallen এবং SELISE এর যৌথ অংশীদারত্বে গঠিত হয়েছে। এই প্রোগ্রামের আওতায়, প্রাথমিক পর্যায়ের স্টার্টআপগুলোর জন্য ক্ষমতা উন্নয়ন, পরামর্শ এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে, যেন তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়াও ২০২৩-২৪ সালে, সায়েন্স বী Orange Corners Bangladesh কর্তৃক পরিচালিত ইনকিউবেশন প্রোগ্রামের ছয় মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচিত হয়। মোট ২২৯টি অংশগ্রহণকারীর মধ্যে শুধুমাত্র ১৪টি স্টার্টআপ এই ইনকিউবেশন পর্বে অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে ১৩টি স্টার্টআপ সফলভাবে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে, এবং সায়েন্স বী ছিল তাদের মাঝে অন্যতম।
সায়েন্স বী তে ভলিন্টিয়ার কাজের সুযোগ
সায়েন্স বী তে স্কুল পর্যায় (দশম শ্রেণি) হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে চমৎকার কিছু ভলিন্টিয়ার কাজের সুযোগ, যা তাদের সায়েন্টিফিক কমিউনিকেশন, লেখালেখির দক্ষতা থেকে শুরু করে আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে।
১. সায়েন্স বী নিউজ টিম
সায়েন্স বী নিউজ টিমে নিউজ এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে দেশ বিদেশের বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ঘটে চলা বিভিন্ন অগ্রগতি এবং বিষয়াদি সম্পর্কে মাতৃভাষা বাংলায় সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারেন। এতে তাদের যেমন নিজস্ব লেখার একটি পোর্টফলিও তৈরি হয়, ঠিক তেমনি লেখালেখির মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় সহজভাবে সায়েন্টিফিক কমিউনিকেশন এর দক্ষতা। সায়েন্স বী নিউজ টিমের কিছু সদস্য আমাদের সাথে তাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
সায়েন্স বী নিউজ টিমের সায়েন্স নিউজ এক্সিকিউটিভ মো. তাহমিদুল ইসলাম অর্ণব জানান,
“Science Bee তে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের। মহাকাশ বিষয়ক গবেষণা, বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার নিয়ে আগে শুধু ভেবেই যেতাম কিন্তু Science Bee নিউজ টিমে যুক্ত হওয়ার পর এসব নিয়ে নিজেই ঘাটাঘাটি করে নিজের মতো করে অন্যদের বুঝানোর সুযোগ হয়েছে। টিমের সিনিয়র সদস্যরা প্রতিনিয়ত দিকনির্দেশনা ও উৎসাহ দিয়েছেন। এই অভিজ্ঞতা আমাকে বিজ্ঞান জগতের আরো গভীরে যেতে সাহায্য করেছে এবং আমাদের টিমের প্রতিটি সদস্যের সঙ্গে একসাথে কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি যা বলে শেষ করা যাবে না।”
সায়েন্স বী’র সিনিয়র নিউজ কো-অর্ডিনেটর শাহলীন রাহনুমা জানান,
“আমার একাডেমিক লাইফে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে, যেখানে STEM সংক্রান্ত নিউজ আগে খুঁজেই পেতাম না, এখন আমি এর নিয়মিত পাঠক! আর কাজের অভিজ্ঞতা তো বলাই বাহুল্য, একটা টিমে কাজ করা, টিম কে গাইড করা, leadership গড়ে তোলা- সবকিছু শেখানোর জন্য সায়েন্স বী র কাছে কৃতজ্ঞ।”
সায়েন্স বী’র নিউজ এডিটর আমিনুল ইসলাম সিয়াম বলেন,
“বিজ্ঞান সম্পর্কে আমার পূর্বধারণা ছিল কেবল পাঠ্যবই নির্ভর, তবে সাইন্স বী টিমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিজ্ঞানের বিশাল ও চমকপ্রদ জগৎকে নতুনভাবে জানতে পেরেছি। সাইন্স বী নিউজ টিমের একজন গর্বিত মৌমাছি ও নিউজ এডিটর হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কেবল কাজই করিনি, বরং জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছি।”
সায়েন্স বী কন্টেট রিসার্চ টিম
সায়েন্স বী পেইজে প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের বিভিন্ন চমকপ্রদ বিষয় নিয়ে আর্টিকেল লেখায় কাজ করে যাচ্ছেন একদল পরিশ্রমী ভলিন্টিয়ার শিক্ষার্থী। এই কাজের মাধ্যমে তারা কীভাবে বিজ্ঞানের একটি জটিল বিষয়কে শুধু সহজভাবে বাংলা ভাষায় উপস্থাপনই নয়, বরং সংক্ষেপে প্রকাশ করার ক্ষেত্রেও দক্ষতা অর্জন করেন।
কন্টেট রিসার্চ টিমের কো-অর্ডিনেটর জিহাদুল আমিন কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে যেয়ে বলেন,
“আমি গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে সায়েন্স বী এর সঙ্গে যুক্ত আছি। বর্তমানে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কনটেন্টের গুণগত মান নিশ্চিত করা, টিম পরিচালনা এবং জটিল বৈজ্ঞানিক বিষয় ও গবেষণাকে সহজ ও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করার দায়িত্ব পালন করছি। বিজ্ঞান শিক্ষাকে কেবল পাঠ্যবইয়ের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না রেখে, বাস্তব জীবনের প্রেক্ষাপটে তা উপস্থাপন করে বিজ্ঞান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তরুণদের গবেষণার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে সায়েন্স বী এর এই প্রয়াসের অংশ হতে পারা আমার জন্য একান্ত গর্বের বিষয়।”
সায়েন্স বী গ্রুপ মডারেশন টিম
সায়েন্স বী’র বিজ্ঞান ও গবেষণা গ্রুপ, বিজ্ঞান গ্রুপ এবং এই পোস্টে বিজ্ঞান কই? গ্রুপগুলোতে বিজ্ঞান চর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ ধরে রাখতে সহায়তা করছেন দক্ষ মডারেটর গ্রুপ। যারা বিভিন্ন সময় বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন ভুল তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে সমাজে সচেতনতার কাজও করে থাকেন।
কমিউনিটি কো-অর্ডিনেটর, শাহ রেয়াজুর রহমান রাজ, সায়েন্স বী’র সাথে তার কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন,
“সায়েন্স বী-এর সাথে আমার যাত্রা শুরু অনেক আগেই, একজন ফেসবুক গ্রুপ কন্ট্রিবিউটর হিসেবে। তবে প্রথমবার আনুষ্ঠানিকভাবে টিম মেম্বার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাই ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে, “Science Bee – বিজ্ঞান গ্রুপ” এর মডারেটর সিলেকশনের মাধ্যমে। যদিও আমি বিজ্ঞান গ্রুপের মডারেটর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলাম, বাস্তবে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সায়েন্সবী-এর মিম গ্রুপ “এই পোস্টে বিজ্ঞান কই?“-এ কাজ করার জন্য।
সেই সময় থেকেই আমি এই গ্রুপে নিয়মিতভাবে সক্রিয় আছি। শুরুতে মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও ধীরে ধীরে আমি গ্রুপ কো-অর্ডিনেশন এবং পেইজ পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যুক্ত হই। এই পুরো পথচলাটা আমার জন্য ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। একজন টিম লিডার হিসেবে সায়েন্সবী আমাকে নেতৃত্ব, কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং দলগত কাজের নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক শিখিয়েছে। একইসাথে, সিনিয়র ও জুনিয়র টিম মেম্বারদের আন্তরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ আমার পথচলাকে আরও আনন্দময় করে তুলেছে।”
সায়েন্স বী গ্রাফিক্স টিম
যেকোন লেখাকে সম্পূর্ণভাবে বুঝতে ছবির বিকল্প নেই। ঠিক তেমনিই সায়েন্স বী’র প্রতিটি আর্টিকেল এর জন্য প্রয়োজনীয় চমৎকার পোস্টার, ফটোকার্ড রেডি করতে কাজ করছে সায়েন্স বী গ্রাফিক্স টিম এর সদস্যরা।
সায়েন্স বী গ্রাফিক্স টিমে কাজের অভিজ্ঞতা হিসেবে সিনিয়র গ্রাফিক্স ডিজাইন এক্সিকিউটিভ, তারিকুল ইসলাম জানান,
“সায়েন্স বী’র ডিজাইনগুলো ছিল একটু আলাদা, প্রয়োজন হতো একটু অন্যরকম রিসোর্সের ,যা আমাকে আরও ক্রিয়েটিভ ডিজাইন তৈরি করতে এবং এআই ব্যবহারের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করেছে।”
সায়েন্স বী’র এই অসাধারণ অগ্রযাত্রার নেপথ্যে রয়েছে এর সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরলস অংশগ্রহণ ও ভালোবাসা। আর এই যাত্রাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের প্রগতিশীল নেতৃত্ব।
সায়েন্স বী’র প্রতিষ্ঠাতা ও CEO মবিন সিকদার, কো-ফাউন্ডার অন্বয় দেবনাথ এবং সাদিয়া বিনতে চৌধুরী—তাঁদের দূরদৃষ্টি, উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা ও নেতৃত্বই আজকের এই সাফল্যের অন্যতম চালিকাশক্তি।
তাঁদের নেতৃত্বে সায়েন্স বী শুধু একটি প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং লক্ষাধিক বিজ্ঞান অনুরাগীর জন্য হয়ে উঠেছে অনুপ্রেরণার বাতিঘর। এভাবেই একদিন বিজ্ঞান চর্চার অদম্য এই শিখা সারা দেশের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে যাবে—এই প্রত্যাশাই আমাদের সকলের।
দিদারুল ইসলাম / নিজস্ব প্রতিবেদক