রবার্ট প্যাটিনসনকে বিজ্ঞানের গবেষণা মতে বিশ্বের সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি মূলত খ্যাতি অর্জন করেছেন “টুইলাইট” সিরিজের ভ্যাম্পায়ার চরিত্র “এডওয়ার্ড” হিসেবে অভিনয় করে।
‘গোল্ডেন রেশিও অব বিউটি ফাই‘ এর হিসাব মতে,
৩৩ বছর বয়সী ব্রিটিশ অভিনেতা রবার্ট প্যাটিনসন ৯২.১৫ শতাংশ নিখুঁত চেহারার অধিকারী। তার চোখ, ভ্রু, নাক, ঠোঁট, চিবুক, চোয়াল এবং মুখের আকার পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় তা অন্যান্য তারকাদের সাথে তুলনায় প্রায় নিখুঁত।
রবার্ট প্যাটিনসন এর চেহারার এই হিসাব নিকাশ করেছেন লন্ডনের হার্লি স্ট্রিট স্কিন ক্লিনিকের ফেসিয়াল সার্জন ড. জুলিয়ান ডি সিলভা। তিনি মূলত সার্জারির মাধ্যমে চেহারার সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলার জন্য খ্যাত। এই হিসাবটি করার জন্য তিনি আধুনিক ম্যাপিং টেকনিক এর সাহায্য নিয়েছেন। এই ম্যাপিং টেকনিক এর সাহায্যে মূলত একজন মানুষের চেহারার যেই বৈশিষ্ট্যের জন্য তাদেরকে সুন্দর লাগে তা বের করে সার্জারির মাধ্যমে তাদেরকে নিখুঁত চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
ড. ডি সিলভা এর মতে, শারীরিক সৌন্দর্যের বিষয়ে রবার্ট প্যাটিনসন একেবারেই নিখুঁত। তার চেহারার আকৃতির জন্য তিনি পেয়েছেন ৯১.১%, কপালের গড়নের জন্য পেয়েছেন ৯৩.৬%, চোখের অবস্থানের জন্য পেয়েছেন ৯৪.৭%, নাকের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের জন্য তিনি পেয়েছেন ৯৪.৬৭%, চিবুকের জন্য পেয়েছেন ৯৫.১% নম্বর। কিন্তু তার ঠোঁটের গড়ন পাতলা হওয়ার ঠোঁটের প্রস্থের জন্য পেয়েছেন ৮৯.৪% এবং সম্পূর্ণ ঠোঁটের জন্য পেয়েছেন ৮২% নম্বর। সব মিলিয়ে তার গোল্ডেন রেশিও রেটিং ৯২.১৫ শতাংশ।
রবার্ট প্যাটিনসন এর সাথে প্রতিযোগিতায় ছিলেন হেনরি ক্যাভিল, ব্রেডলি কুপার ও ব্র্যাড পিট এর মতো সুদর্শন অভিনেতারাও। গোল্ডেন রেশিও মতে, হেনরি ক্যাভিল এর স্কোর ছিলো ৯১.৬৪ শতাংশ। অন্যদিকে কুপারের স্কোর ছিলো ৯১.০৮ শতাংশ এবং পিটের স্কোর ছিলো ৯০.৫১ শতাংশ।
ঠিক একইভাবে “গোল্ডেন রেশিও” মতে ২৩ বছর বয়সী সুপারমডেল বেলা হাদিদকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী নারী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিলো। তার বিউটি স্কোর ছিলো ৯৪.৩৫ শতাংশ।
এখন প্রশ্ন হলো এই “গোল্ডেন রেশিও” টা কি? এটি দিয়ে কিভাবে সৌন্দর্যের বা কে কতটুকু সুদর্শন তা হিসেব করে? আসুন জেনে নেওয়া যাক,
প্রকৃতির প্রায় সবকিছুতেই জড়িয়ে আছে গোল্ডেন রেশিও। গোল্ডেন রেশিও হচ্ছে একটি গাণিতিক অনুপাত যার মান 1.618033988……। অর্থাৎ, এটি একটি অমূলদ সংখ্যা। Golden Ratio বা সোনালী অনুপাতকে প্রকাশ করা হয় Φ (PHI/ ফাই ) দ্বারা। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি গোল্ডেন রেশিওকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘The Divine Proportion’ বা ‘স্বর্গীয় অনুপাত’ হিসেবে। তাকে গোল্ডেন রেশিও এর মাস্টার বলা হয়, কেননা তিনিই প্রথম মানবদেহে ফাই এর উপস্থিতি লক্ষ্য করেন।
আরে! মানবদেহে PHI কোথা থেকে আসলো আবার? বুঝেন নি তাই তো? আসুন আরেকটু গভীরে যাওয়া যাক।
যেকোনো মানুষের ক্ষেত্রে,
দেহের সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য : নাভির নিচ বাকি অংশের দৈর্ঘ্য =1.6180…(Φ)।
আঙুলের মাথা থেকে কনুই পর্যন্ত দৈর্ঘ্য : কবজি থেকে কনুই পর্যন্ত দৈর্ঘ্য = 1.6180…(Φ)।
কাঁধ থেকে হাটু পর্যন্ত দৈর্ঘ্য : হাটু থেকে পায়ের আঙুলের মাথা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য = 1.6180…(Φ)।
বাহুর দৈর্ঘ্য : সম্পূর্ণ হাতের দৈর্ঘ্য = 1.6180…(Φ)।
মানুষের মুখমণ্ডলের দৈর্ঘ্য : প্রস্থ = 1.6180…(Φ)।
ঠোঁটের দৈর্ঘ্য : নাকের প্রস্থ = 1.6180…(Φ)।
চোখের দুই প্রান্তের দূরত্ব, চুল থেকে চোখের মণির দূরত্ব = 1.6180…(Φ)।
এভাবে সমগ্র মানবদেহে পাওয়া যাবে ৩০০ এর বেশি ফাই। এর মধ্যে মানুষের মুখমন্ডলেই আছে ৩০ টিরও বেশি ফাই অনুপাত। শুধু মানবদেহেই নয়, সমগ্র বিশ্বের সবকিছুতে ফাই পাওয়া যাবে। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি এই ফাই কেই তার শিল্পকর্মে ব্যবহার করেছেন। যেমন: Mona-lisa, The last Supper, Mary Magdalene এর মতো বিশ্ব বিখ্যাত শিল্পকর্মে PHI এর ব্যবহার আছে।
কোনো মানুষের সৌন্দর্য গোল্ডেন রেশিও বা সোনালী অনুপাত দিয়ে পরিমাপের জন্য চেহারার বিভিন্ন অংশের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মেপে অনুপাত নির্ণয় করা হয়। এই অনুপাতগুলোর মান 1.6180…= PHI (Φ) এর যত কাছাকাছি হবে সেই মানুষটি তত বেশি সুদর্শন। এই হিসেব মতেই বিভিন্ন তারকাদের সৌন্দর্যের পরিমাপ বৈজ্ঞানিকভাবে করা হয়।
নিশাত তাসনিম/ নিজস্ব প্রতিবেদক