সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত কোভিড-১৯ রোগে বাংলাদেশ এ একজন শিশু শনাক্ত হওয়াতে অনেক অভিভাবকরাই চিন্তায় পড়ে গেছেন।
যদিও গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও খুব একটা গুরুতর অসুস্থ হয় না। কিন্তু যদি আক্রান্ত হয়েও যায় তাহলে তার মধ্যে এই ভাইরাসের কোন উপসর্গ নাও প্রকাশ ঘটতে পারে।
ভাইরাসে আক্রান্ত ছাড়াও চিকিৎসা, শিশুর যত্ন এবং শিশুর প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের অভাব শিশুর ওপরে পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।তাই আমাদের হাতে যা যা সুযোগ আছে সেগুলো আগে থেকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করলে আমাদের সামনের দিনে যা আসতে যাচ্ছে তাকে মোকাবিলা করা সহজ হবে।
স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া কঠিন হতে পারে,কিন্তু উপায় আছেঃ
কোভিড-১৯ এর জন্য যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশের বেশী মানুষকে ২ সপ্তাহ বা তার বেশী সময়কাল এর জন্য হাসপাতালে অবস্থান করতে হচ্ছে।
![]() |
হাসপাতালে করোনাভাইরাস এ আক্রান্ত অন্যান্য রোগীদের কারণে বাচ্চা যদি অন্য কোন কারণে অসুস্থ হয় তাহলে সেবা পাওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। তাই বাচ্চা অসুস্থ হলে ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসক এর সাথে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে,সরাসরি দেখা করার পরিবর্তে।এতে জনসমাগম থেকে দূরে থাকার কারণে শিশুর শরীরে ভাইরাসের আক্রমণ করার ঝুঁকি কমে যাবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা ভাবতে হবেঃ
প্রথমেই,শিশুর জন্য আগে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া,অন্য মানুষের সংস্পর্শ যথাসাধ্য এড়িয়ে চলা,হাঁচি-কাশি আসলে হাতের কনুই এ অথবা টিস্যু ব্যবহার করা এবং
চোখ,নাক,মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকার অনুশীলন করতে হবে।বাচ্চারা যেহেতু যখন-তখন মুখে হাত দিয়ে থাকে তাই বারবার তাদের মুখ এবং হাত ধুয়ে দিতে হবে।এবং মেঝে বা যেইসকল জিনিস বাচ্চা স্পর্শ করতে পারে সেইগুলো জীবাণুনাশক দ্রবণ দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।এইগুলো বাচ্চাদের যেকোন ইনফেকশন থেকে দূরে রাখবে।
লবণ মেশানো গরম পানি কি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করে ?-না |
ডে-কেয়ারে কি নিরাপদঃ
কর্মজীবী অভিভাবক তাদের সন্তানকে ডে-কেয়ারে সময় কাটানো এবং পরিচর্যার জন্য দিয়ে থাকেন।কিন্তু,যেইসকল বাচ্চা ঘরে থাকে তাদের চাইতে ডে-কেয়ারে থাকা বাচ্চারা অসুস্থ হয় বেশী।
এর কারণ হচ্ছে,বাচ্চাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা তেমন সুষ্ঠুভাবে গঠিত না থাকায় যখন এক বাচ্চা আরেক বাচ্চার সংস্পর্শে আসে তখন বিভিন্ন খেলনা ও অন্যান্য জিনিসের মাধ্যমে তাদের লালা পরষ্পর ভাগ করতে পারে।
তাই যদি ডে-কেয়ারে নিতান্ত বাচ্চাকে রাখতেই হয় তবে বাচ্চাকে কোলে নেওয়া বা আদর করার আগে তাদের হাত-মুখ ধুয়ে দেওয়া,কাপড় বদলানো এবং সবশেষে নিজের হাত-মুখ সাবান দিয়ে ধুয়ে তবেই বাচ্চাকে স্পর্শ করুন।
সময়মত ভ্যাকসিন দেওয়াঃ
![]() |
নিয়মমাফিক ভ্যাকসিন বাচ্চাদের সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকরীভাবে শিশুদের রোগ থেকে রক্ষা করে।তাই সময়মত ভ্যাকসিন দিয়ে আপ-টু-ডেট থাকলে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তেমন থাকবেনা।
শিশু স্তন্যদুগ্ধ পান করলেঃ
মায়ের বুকের দুধে এমন অনেক উপাদান থাকে যেগুলো শিশুকে ইনফেকশন থেকে প্রতিরোধ করে এবং ইনফেকশন এর বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।শিশুর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত তাকে শুধু বুকের দুধ এবং শিশুর দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খাওয়ানো সুপারিশ করা হয়।
যদি আপনার শিশু ছয় মাসের কম বয়সী হয়ে থাকে তবে শুধু স্তন্যদুগ্ধ তাকে নানারকম ইনফেকশন থেকে রক্ষা করবে এবং কোন প্রকার চিকিৎসা বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন থেকে দূরে রাখবে।
যদি আপনার শিশু স্তন্যদুগ্ধ পানের পাশাপাশি কোন ফর্মুলা ব্যবহার করে থাকে তাহলে সেই ফর্মুলার পরিবর্তে কেবল মায়ের বুকের দুধকেই প্রাধান্য দিতে হবে।এক থেকে আড়াই বছরের শিশুদের যদি মায়ের দুধ পান চলতে থাকে তবে করোনা ভাইরাস মহামারি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাপদ রাখবে।
রক্তের গ্রুপ ‘A’ হলে করোনা ঝুঁকি বেশি, ‘O’ হলে সবচেয়ে কম – বলছে চীনা গবেষণা |
ফর্মুলা ব্যবহার করে থাকলেঃ
ইনফ্যান্ট ফর্মুলা তৈরী করার সময় অপ্রত্যাশিত ভাবে বোতলে খুব সহজেই জীবাণু প্রবেশ করতে পারে।তাই বোতল প্রস্তুত করার সময় সতর্ক থাকতে হবে।অর্থাৎ দুই হাত সাবান দিয়ে খুব ভালভাবে ধোয়া,ফিডারের বোতল ভালমতো পরিষ্কার করা,প্রতি ব্যবহারের পরপর বোতল জীবাণুমুক্ত করা,এবং ফর্মুলা তৈরী করার সময় গরম পানি ব্যবহার করা-এইসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
মনে রাখতে হবে,শিশুকে খেতে দেওয়ার আগে হালকা ঠান্ডা করতে চাইলে ফ্রিজে কিছু সময় বোতল রেখে দিতে হবে,বোতলটি ভালমতো ঝাঁকাতে হবে এবং শিশুর জন্য সহনীয় গরম কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।
করোনা ভাইরাসের সকল আপডেট
|
জোগান মজুদ রাখাঃ
অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে গেলে আপনি হয়তোবা আপনার শিশুর প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর সরবরাহ নাও পেতে পারেন।
তাই সেল্ফ-আইসোলেশন এর জন্য আগে থেকেই দুই থেকে তিন সপ্তাহের জন্য শিশুর প্রয়োজনীয় পণ্য যেমন,ন্যাপি মজুদ রাখার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে।এই সময়ের জন্য ন্যাপি নিতান্ত মজুদ করতে না পারলে হাতের কাছে ধোয়া যায় এমন কাপড়ের ন্যাপি রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
যদি আপনার বাচ্চাকে ফর্মুলা খাওয়াতে থাকেন তবে পর্যাপ্ত মেয়াদকাল দেখে প্রায় তিন সপ্তাহের জন্য ইনফ্যান্ট ফর্মুলা মজুদ রাখতে হবে।
যদি মাকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত করেঃ
![]() |
মায়েরা তাদের সন্তানের চেয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশী থাকেন।তাই যদি আপনি এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন তখনো আপনাকে স্তন্যদুগ্ধদানের জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে।কারণ মায়ের বুকের দুধে ভাইরাস পাওয়া যায়নি।
বাচ্চার কাছে থাকার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন (বুকের দুধ পান করানোর সময়ও) ,শিশুর কাছে আসার আগে ও পরে ভাল করে হাত ধুয়ে নিন,মেঝে,চাদর এবং অন্যান্য যা কিছু শিশুর সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা আছে সবকিছু ধুয়ে পরিষ্কার করে জীবাণুনাশ করে নিন।এইগুলো আপনার শিশুকে আপনার থেকে ভাইরাস ছড়ানো থেকে দূরে রাখবে।
বয়স্ক মানুষদের সুরক্ষা নিয়ে ভাবতে হবেঃ
আপনি অথবা আপনার সংগী যদি অসুস্থতায় ভোগেন তখন বাচ্চার খেয়াল রাখার জন্য অনেকেই বাচ্চার দাদী-নানীকে নিজেদের সাথে রাখতে পছন্দ করেন।
কিন্তু মাথায় রাখতে হবে,৬০ বছরের উপরের মানুষগুলো করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ এমনকি মারা যাওয়ারও ঝুঁকি আছে।তাই বয়স্ক কাউকে শিশুর দেখাশোনার দায়িত্ব না দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে।
![]() |
একটু সচেতনতাই পারে আপনাকে এবং আপনার আশেপাশের মানুষকে সুস্থ রাখতে।তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে আমরা সবাই নিজেকে প্রস্তুত রাখাটাই হবে বুদ্ধিদীপ্ত কাজ।