মূত্র বা লালা পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক সহজলভ্য বিষয়। খুব সহজেই এ টেস্টগুলো করে বেশ কিছু রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। কিন্তু এবার বিজ্ঞানীরা রোগনির্ণয়ে চোখের পানি ব্যবহার করে সফলতার মুখ দেখেছেন।
বহু গবেষণার পর ওয়েনঝো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ফেই লিউ এর নেতৃত্বে একদল চীনা গবেষক দিলেন চমকপ্রদ একটি খবর। মানুষের চোখের পানি ব্যবহার করে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের কৌশল উদ্ভাবন করেছেন তারা। বিষয়টিকে আরেকটু সহজভাবে জানা যাক।
চোখের পানি মূলত ল্যাক্রিম্যাল গ্রন্থি থেকে নিসৃত পানি, শ্লেষ্মা, তেল ও ইলেক্ট্রোলাইটের জটিল মিশ্রণ। যা চোখের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে চোখকে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। চোখের পানিতে ৯৮% পানি ও ২% অন্যান্য উপাদান রয়েছে। যার মধ্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম অক্সাইড, পটাশিয়াম অক্সাইডের মতো লবণ ছাড়াও গ্লুকোজ, সুক্রোজ, ইউরিয়া, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, নাইট্রোজেন রয়েছে।
ভাবছেন রোগনির্ণয়ে চোখের পানি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে কীভাবে? তাহলে এবার বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
মানুষের চোখের পানি অনেক দরকারী তথ্য প্রদান করতে পারে। মাত্র কয়েক ফোঁটা চোখের পানি দিয়ে নতুন উপায়ে চোখের রোগ থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস পর্যন্ত শনাক্ত করা যেতে পারে।
ফেই লিউ বলেন,
“চোখের পানি ব্যবহার করে রোগ শনাক্ত করা যে সম্ভব, আমরা সেই সম্ভাবনাই দেখাতে চেয়েছিলাম।”
যদি বিজ্ঞানীরা মাইক্রোস্কোপিক মেইলব্যাগ গুলোকে আটকাতে পারেন, তবে শরীরের ভেতর কী ঘটছে তা সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রদান করতে পারবে। লালা এবং প্রস্রাবের মতোই চোখের পানিতে সেলুলার বার্তা দিয়ে ভর্তি ছোটো ছোটো থলি থাকে। এ থলিগুলোকে বলা হয় এক্সোসোম। এক্সোসোম নামে পরিচিত এ থলিগুলো যথেষ্ট পরিমানে সংগ্রহ করা কঠিন।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগছে হয়তো, এক্সোসোম থলিগুলো কীভাবে প্রথম গবেষণার আওতায় আনা হলো? চোখের পানি ব্যবহার করে রোগ নির্ণয়ের কৌশলই বা কী? এবার আসা যাক এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে।
লিউ-এর দল চোখের পানির ফোঁটাগুলোর ক্ষুদ্র ভলিউম থেকে এক্সোসোম থলিগুলো ক্যাপচার করার জন্য একটি নতুন উপায় তৈরি করেছেন। প্রথমে গবেষকদল গবেষণায় অংশগ্রহণকারী বিজ্ঞানীদের থেকে চোখের পানি সংগ্রহ করেছিলেন। তারপর তারা ন্যানোপোরাস মেমব্রেন সহ একটি যন্ত্রে চোখের পানিযুক্ত দ্রবণ যোগ করে তারপর মেমব্রেন কম্পিত করেন এবং তা দ্রবণটি চুষে নেয়। এ কৌশলটি কয়েক মিনিটের মধ্যে ছোটো অনুগুলো থেকে এক্সোসোম থলিগুলোকে আলাদা করে ফেলে।
আর এই গবেষণার ফলাফল বিজ্ঞানীদের দিয়েছে নতুন আশা। মূলত গবেষকদল আবিষ্কার করতে পেরেছেন যে, বিভিন্ন ধরনের শুষ্ক চক্ষু রোগের আণবিক ছাপ মানুষের চোখের পানিতে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন, এর মাধ্যমে রোগীদের শরীরে কীভাবে ডায়াবেটিস বিকাশ লাভ করে তা চোখের পানি ব্যবহার করে নিরীক্ষণ করতে চিকিৎসকদের সাহায্য করবে।
কিন্তু তাই বলে চোখে খোঁচা দিয়ে পানি ফেলা যাবে না আবার! হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার লুক লি বলেন,
“গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন রোগ এবং বিষণ্নতা বা মানসিক চাপ থেকে উদ্ভূত চোখের পানি ব্যবহার করা হয়েছে।”
চোখের পানি আরো এমন অনেক কিছু প্রকাশ করে যা এখনো গবেষণা করা হয়নি। সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটি তাদের প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার এবং অন্যান্য অসুস্থতাকে লক্ষ্য করে দীর্ঘমেয়াদী কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে।
আরোও পড়ুন: চোখের পানি বরফ হয় না কেন?
মজার বিষয় হচ্ছে চোখের পানি নিয়ে এমন গবেষণা কিন্তু এবারই প্রথম না! প্রায় 100 বছর আগে নোবেল বিজয়ী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং আবিষ্কার করেছিলেন যে মানুষের চোখের পানিতে অ্যান্টিসেপটিক প্রোটিন রয়েছে, যা লাইসোজাইম নামেও পরিচিত। চোখের পানি কীভাবে বেশ বড় ব্যাকটেরিয়া নিশ্চিহ্ন করতে পারে তার রহস্য সমাধান করার জন্য বিজ্ঞানীরা নিরলস চেষ্টা করেছেন।
তবে এটা খুব স্পষ্ট যে, আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে চোখের পানি ব্যবহার করে কেবল ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা চোখের রোগ ছাড়াও জটিল আরো অনেক রোগ নির্ণয় সম্ভব হবে। চোখের পানির ফোঁটাগুলো গবেষকদের মানব শরীরের ভেতরে উঁকি দেওয়ার একটি জানালা খুলে দিতে পারে। এমনকি মানুষ একদিন ঘরে বসেই এ পরীক্ষাগুলো করতে পারবেন।
তথ্যসূত্র: Sciencenews.org
জেসিকা আক্তার/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
+1
+1
1
+1
+1
2
+1
1
+1
1