“মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, সে মূহুর্তে যেন আমার পুরো জীবন চোখের সামনে ভেসে উঠলো। ছেলেবেলা, বাবা-মা, কলেজ জীবনে বন্ধুদের আড্ডা, তারুণ্য, সবকিছুই যেন ঝলক খেলে গেলো।”
বিভিন্ন বই-সিনেমায় মৃত্যুর ঠিক আগ মূহুর্তের অভিজ্ঞতার এমন বর্ণনাই আমরা পড়ে এসেছি। কিন্তু আসলেই কী এমনটি হয়? মস্তিষ্ক মৃত্যু-র আগে সকল স্মৃতি আবার আমাদেরকে দেখায়? গবেষকেরা সম্প্রতি এ প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে বের করেছেন।
এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি কিন্তু ঘটেছিলো দূর্ঘটনাবশত! ২০১৬ সালে মৃগী রোগে আক্রান্ত ৮৭-বছর বয়সী একজন কানাডিয়ান রোগীর ইলেক্ট্রোএন্সেফালোগ্রাম (ইইজি) করছিলেন একদল ডাক্তার। মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমে অস্বাভাবিকতা ধরার জন্য এই টেস্ট করানো হয়। মূলত খিঁচুনির সময় তাঁর মস্তিষ্কে কী হচ্ছে তাই দেখতে চেয়েছিলেন ডাক্তারেরা। দূর্ভাগ্যবশত সেই সময়েই হঠাৎ একটি প্রাণঘাতী হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন তিনি। রোগীটি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও ডাক্তারদের জন্য রেখে গেলেন এক অমূল্য উপহার- মৃত্যুর ঠিক আগে এবং পরে মস্তিষ্কের কার্যকলাপের সর্বপ্রথম রেকর্ডিং।
গবেষকেরা সবমিলিয়ে মৃত্যুর আগে এবং ঠিক পরের প্রায় ৯০০ সেকেন্ডের কার্যক্রমের রেকর্ডিং করতে পেরেছিলেন। পরে তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাঁরা লক্ষ্য করলেন যে, রোগীর হৃৎপিণ্ড থামার আগে এবং পরে ৩০ সেকেন্ডে তাঁর মস্তিষ্কের তরঙ্গ কার্যকলাপে এক অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয়েছিলো।
“আমরা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট স্নায়বিক তরঙ্গেই পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলাম,” বললেন ড. আজমল জেমার, সেসময়ের টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জন। বর্তমানে তিনি কেনটাকির লুইসভিল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত।
স্নায়বিক তরঙ্গ মূলত তাদের ফ্রিকোয়েন্সি অনুযায়ী শ্রেণীভুক্ত করা হয়। দলটি রেকর্ডিং-এ ডেলটা, থেটা, অ্যালফা, বিটা এবং গামা তরঙ্গের ট্রেস পেয়েছিলেন। এগুলোর ভেতর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গামা তরঙ্গের উপস্থিতি। আমরা যখন স্মৃতিচারণ করি, তখন মস্তিষ্কে হিপোক্যাম্পাস নামক এক অঞ্চলে এই গামা তরঙ্গের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। রেকর্ডিং-এও গামা তরঙ্গের উপস্থিতি বোঝায় যে, লোকটি মৃত্যুর ঠিক আগে স্মৃতিচারণ করছিলেন, ঠিক আমরা গল্পে যেমনটি শুনে থাকি।
ইঁদুরদের মাঝেও পরীক্ষা করে ঠিক একই রকম ফলাফল পাওয়া গেছে। এর ফলে গবেষকেরা ধারণা করছেন যে, মৃত্যুর আগে স্মৃতিচারণ বোধহয় সব স্তন্যপায়ী প্রাণীই করে থাকে, যদিও এ উপসংহারে পৌঁছতে আরো অনেক প্রমাণ প্রয়োজন।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা মৃত্যুর আগে স্মৃতিচারণকে একটি আসল, প্রমাণিত বিষয় হিসেবে ধরে নেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। প্রথমত লোকটি মৃগীরোগে আক্রান্ত ছিলো, যা কিনা মস্তিষ্কে গামা তরঙ্গে পরিবর্তন ঘটায়, সুতরাং তাঁর মস্তিষ্ক কার্যক্রম এবং একজন সুস্থ মানুষের কার্যক্রমের ভেতর পার্থক্য থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না যে, মৃত্যু-র আগে আসলেই উনি স্মৃতি-চারণ করছিলেন, নাকি অসুস্থতার কারণে তার মস্তিষ্ক একটি স্বপ্নীল ঘোরে চলে গিয়েছিলো।
নিজস্ব প্রতিবেদক\ হাসিনাত রিফা
তথসূত্রঃ LIVE SCIENCE, বিবিসি
+1
1
+1
1
+1
2
+1
2
+1
14
+1
3
+1
2