হঠাৎ তাকালে চেনা কাউকে চিনতে না পারা কিছু মুহূর্তের জন্য, এটা হয়ত আমরা কোনো রোগ মনে করি না। কিন্তু আসলেই মুখ অন্ধত্ব বা চেনা কাউকে চিনতে না পারা বা মুখ না চেনা কিন্তু একটা রোগ।
হঠাৎ অনেকদিন পর কাউকে দেখে আপনি হয়ত তাৎক্ষণিক তার নাম মনে করতে পারছেন না বা চিনতে পারছেন না সে কে। এই জিনিসটা আমাদের অনেকের ক্ষেত্রে প্রায়ই ঘটে। আমরা হয়ত ভাবি এটা হতেই পারে অনেকদিন পর কারো সাথে দেখা হলে। কিন্তু যদি সারা জীবনের জন্য আপনি কাউকে, এমনকি নিজের চেহারাও চিনতে না পারেন, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে বলুন তো? আপনার কী মনে হয়? বিষয়টা কী স্বাভাবিক? মোটেই না। আজকে যে রোগটা নিয়ে আমরা জানবো তা হলো প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া (Prosopagnosia)।
কী এই প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া (Prosopagnosia)?
প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া এমন একটি রোগ যার ফলে মানুষ দুইটি চেহারার মধ্যে পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, এক্ষেত্রে চেনা মানুষদের চেহারাও চিনতে না পারা একটা অন্যতম লক্ষণ। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, এমনকি নিজেদের চেহারাও চিনতে পারে না তাঁরা। স্বাভাবিক-ভাবেই ধীরে ধীরে জীবনটা তাঁদের জন্য হয়ে ওঠে দুর্বিসহ।
সাধারণত মস্তিষ্কের অক্সিপিটোটেম্পোরাল লোব (Occipitotemporal lobe)-এ আঘাতের কারনে হয়; এ অংশটি মানুষটি যা দেখছে তার প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করায় মুখ্য ভূমিকা রাখে। ব্যাপারটি এমন নয় যে আক্রান্ত রোগীরা মানুষের মুখই দেখতে পারে না; তাঁরা শুধু বিভিন্ন চেহারার ভেতর পার্থক্য ধরতে পারে না। ফলে একজন মানুষের থেকে আরেকজনকে আলাদা করাটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। আপনি হয়ত এখন অবাক হবেন,বিখ্যাত অভিনেতা ব্র্যাড পিট-ও এই মুখ অন্ধত্ব বা ফেইস ব্লাইন্ডনেস-এ আক্রান্ত।
প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া স্মৃতিশক্তি, দৃষ্টিশক্তি বা বুদ্ধিমত্তার সাথে সম্পর্কিত নয়; কিন্তু মাঝে মাঝে বিভিন্ন ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার, যেমন অটিজম, টার্নার সিনড্রোম, উইলিয়াম’স সিনড্রোম-এর কারণেও এটি হতে পারে।
প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া মূলত দুই ধরনের হতে পারে-
ডেভেলপমেন্টাল প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া- রোগীর মস্তিষ্কে কোন ক্ষতি ছাড়াই তারা সে প্রসোপ্যাগ্নোশিয়ায় ভোগে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতি পঞ্চাশ জনের প্রায় একজন ডেভেলপমেন্ট প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া স্বীকার হয়। তাঁদের মস্তিষ্কের এই অক্ষমতাটিকে জেনেটিক সমস্যা মনে করা হয় এবং এটি বংশপরম্পরায় চলতে পারে।
এ্যকোয়ার্ড প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া- এ্যকোয়ার্ড প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া কিন্তু আবার তুলনামূলকভাবে দুর্লভ। সাধারণত মস্তিষ্ক কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। এর কারনে হতে পারে স্ট্রোক, অ্যাক্সিডেন্ট, মাথায় আঘাত পাওয়া ইত্যাদি।
যেহেতু মানুষগুলো জন্ম থেকেই অন্যদের চেহারার মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারে; সেজন্য তাঁরা প্রসোপ্যাগ্নোশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই অর্থাৎ কারও চেহারা চিনতে না পারা-র সমস্যা হচ্ছে তা লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারে যে তাঁদের কোন সমস্যা হচ্ছে।
গবেষকদের ধারণা ছিল যে শুধুমাত্র মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়ার ফলেই বুঝি প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া হতে পারে; কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে অনেক মানুষের জন্ম থেকেই প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া, যার আরেকটি নাম ডেভেলপমেন্টাল প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া, থাকতে পারে ।
দুঃখজনকভাবে এ রোগের এখনো কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কার করা হয়নি; কিন্তু গবেষকেরা নিয়মিত রোগীদেরকে নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। সাধারণত প্রসোপ্যাগ্নোশিয়ায় ভোগা রোগীরা জামা, গলার স্বর, হাটার ধরন এবং এরকম ছোট ছোট জিনিস মনে রাখার মাধ্যমে কোন মানুষকে চিনতে পারে; কিন্তু হঠাৎ একটি অচেনা পরিবেশে অচেনা মানুষকে দেখলে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়।
এ্যকোয়ার্ড প্রসোপ্যাগ্নোশিয়ার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে আঘাত লাগার সময়, রোগীর বয়স, আঘাতের ধরণ এবং পরিমাণ, এবং চিকিৎসার সময় সবই প্রসোপ্যাগ্নোশিয়ার রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রামে খুব বড় প্রভাব ফেলে।
আমাদের কর্তব্য হলো ধৈর্য্য এবং সহনশীলতার সঙ্গে প্রসোপ্যাগ্নোশিয়ায় আক্রান্ত রোগীদেরকে সাহায্য করা; যাতে তাঁরাও স্বাভাবিক মানুষজনের মতোই চলাফেরা করতে পারে।
আমেরিকান একাডেমি অব সায়েন্সেস নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশ্ভুত মার্কিন বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক এম. জাহিদ হাসান তাপস। গত...