বিমানের মতো উন্নত নয় রেল পরিষেবা। বিদ্যুৎ চালিত ট্রেন ইঞ্জিনে দূষণ ন্যূনতম হলেও ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মূল জ্বালানি কয়লা। কয়লা চালিত ইঞ্জিন অবলুপ্ত হলেও এখনও বহু দেশেই প্রচলন রয়েছে ডিজেল ইঞ্জিনের। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প পদ্ধতির সন্ধান দিলো যুক্তরাজ্যের একটি সংস্থা। অপ্রচলিত এই নতুন শক্তির উৎসের মাধ্যমেই চলবে তাদের বানানো সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ট্রেন ইঞ্জিন।
বায়োমিথেন হলো এক ধরণের জৈব জ্বালানি যা নর্দমা স্ল্যাজ, চাষের ফসলের অবশিষ্টাংশ, পশুর সার এবং খাদ্য বর্জ্য সহ বিভিন্ন বর্জ্য পণ্য থেকে প্রাপ্ত। এগুলি সমস্ত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ভেঙে এমন একটি গ্যাস তৈরি করে যা ঘুরে দেখা যায়, ক্লিনারের বিকল্প জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যদিও বায়োমিথেন বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ করে, তবুও সমর্থকরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে এটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া দ্বারা তৈরী, তাই যেভাবেই মুক্তি পাক না কেনো এটিকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করে উপাদানগুলিকে কেবল একটি নতুন জীবন দেয় যা ভবিষ্যতে জীবাশ্ম জ্বালানি ফুরিয়ে যাবার পর পৃথিবীকে সচল রাখার জন্য নতুন পথের ধারণা দেয়।
যুক্তরাজ্যের ওয়ার্সেস্টার ভিত্তিক সংস্থা আল্ট্রা-লাইট রেলের প্রযুক্তিবিদরা তৈরি করেছেন অভিনব ট্রেন লোকোমোটিভ, যার নাম বায়োআল্ট্রা। মানুষ, অন্যান্য প্রাণী কিংবা প্রাকৃতিক জৈব বর্জ্য পদার্থকে ব্যবহার করে তৈরি মিথেন গ্যাস দিয়েই চলবে এই ইঞ্জিন। এর ফলে একদিকে যেমন পরিচ্ছন্নতার একটি সমাধান আসবে, তেমনি জ্বালানি খরচও চলে আসবে হাতের মুঠোয়।
ট্রেন ইঞ্জিনের মধ্যেই একটি বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে যা বায়োমিথেনকে পরিণত করবে বিদ্যুতে। তারপর তা দিয়ে ব্যাটারি চার্জ করে ঘোরানো হবে ট্রেনের চাকা। একবার জ্বালানি ভরলে ২০০০ মাইল অবধি চলতে পারবে এই নতুন ট্রেন। ছুটবে সর্বোচ্চ ৫০মাইল গতিবেগে। নতুন এই ট্রেনের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০মিটার। এই ট্রেন ১২০ জন করে যাত্রী বহন করতে পারবে।
এছাড়া একটিমাত্র কোচ হওয়ায় কমবে নিয়ন্ত্রণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ। ডিজেলের ব্যবহার না হওয়ায় নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড ও উৎপাদিত হবেনা। ফলে পরিবেশের ক্ষতিকে সম্পূর্ণভাবে এড়ানো যাবে।
আল্ট্রা-লাইট রেল পার্টনার্সের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার মাল্টিন এক বিবৃতিতে বলেন যে, “নিঃসন্দেহে বায়োমিথেন সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হতে পারে। আমি আনন্দিত যে, বায়োমিথেন দ্বারা চালিত বিশেষ প্রথম ট্রাম-ট্রেন আমরা তৈরি করতে পেরেছি, স্থানীয় পর্যায়ে এর আরো উৎপাদন অব্যাহত রাখা হবে।”
আল্ট্রা-লাইট রেল পার্টনার্সের চেয়ারম্যান বেভেরলি নীলসেন বলেন, “এটি সত্যিই আমাদের ব্যবসায়ের প্রতি আত্মবিশ্বাস যোগায়, যা লাইটওয়েট ও সাশ্রয়ী মূল্যের রেল সুবিধা সরবরাহের উপর সম্পূর্ণ মনোনিবেশিত, ভ্রমণের জন্য আরামদায়ক, আধুনিক, নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ সাথে সাথে ভ্রমণ করার জন্য সাধারণ গাড়ির বিকল্প। যার ফলে সকলের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। আমরা এই সুযোগটি যুক্তরাজ্যের বড়-ছোট সবধরণের শহরের জন্যই দিতে চাই, যেন শহরগুলো থেকে দূষণকারী যানবাহনের সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়।” এবং আশা করা যাচ্ছে, এমন আবিষ্কারগুলো আমাদের মহামারী পরবর্তী জীবনকে আরো সহজ করে তুলবে।
সাদিয়া মীম/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ interestingengineering.com
+1
+1
1
+1
+1
+1
+1
+1