“মার্স অক্সিজেন ইন-সিটু রিসোর্স ইউটিলাইজেশন এক্সপেরিমেন্ট” বা মক্সি (MOXIE) নামক একটি টেকনোলোজি নিয়ে কাজ করতে থাকা বিজ্ঞানীরা ইতিহাসে সর্বপ্রথম পৃথিবীর বাইরে, মঙ্গল গ্রহে অক্সিজেন গ্যাসের মেকানিজম সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছেন।
মক্সি (MOXIE) হলো এমন একটি শক্তিশালী যন্ত্র, যা নাসা মঙ্গল গ্রহে অক্সিজেন গ্যাসের সন্ধান এবং সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যবহার করে থাকে। উল্লেখ্য, অক্সিজেন সন্ধানের মিশনটি বেশ কয়েক বছর ধরেই চলমান রয়েছে; এবং বিশেষজ্ঞরা এই প্রথম গ্রহটিতে অক্সিজেন গ্যাস সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছেন, যা সত্যিই পুরো পৃথিবীবাসীর জন্য এক অভাবনীয় সাফল্য হতে চলেছে।
ধাতব বর্গক্ষেত্র সদৃশ মক্সি নামক ডিভাইসটি গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কিউরিসিটি রোভারের সাথে মঙ্গল গ্রহের ভূপৃষ্ঠ অনুসন্ধান সংক্রান্ত মিশনে অংশ নিয়েছে। কিউরিসিটি রোভার হলো নাসা কর্তৃক পরিচালিত আরেকটি রোবট, যা মঙ্গল গ্রহের ভূপৃষ্ঠে অনুসন্ধান করে যাচ্ছে। গ্রহটির ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানে পানির উপস্থিতি রয়েছে কিনা বা মাটির অবস্থা কেমন, এসব নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে নাসার কিউরিসিটি রোভার।
চলুন এবার জানা যাক, মক্সি নামক ডিভাইসটি অক্সিজেন অনুসন্ধানের লক্ষ্যে কিভাবে কাজ করে থাকে।
টোস্টার মেশিনের মত ক্ষুদ্র একটি যন্ত্র হলো এই মক্সি। এর ম্যাকানিজমের মধ্যে প্রথম কাজ হলো গ্রহের বায়ুমণ্ডল হতে বিভিন্ন গ্যাস চুষে ফেলা এবং সেগুলোকে প্রায় ৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা। এতে করে গ্যাসের মধ্যে থাকা সমস্ত ধূলিকণা ফিল্টারড হয়ে যায়। তারপর ডিভাইসটি গ্যাসগুলো হতে সর্বপ্রথম কার্বন ডাইঅক্সাইড পৃথক করে। পরবর্তীতে গ্যাসে থাকা অবশিষ্ট কার্বন মনোঅক্সাইড বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেয়। আর তারই সাথে অক্সিজেন গ্যাসেরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণিকা সৃষ্টি হয়।
নাসার স্পেস টেকনোলজি মিশন অধিদপ্তরের সহযোগী প্রশাসক জিম রিউটার বলেছেন, “মঙ্গল গ্রহে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস হতে অক্সিজেন গ্যাস রূপান্তর করার এটিই প্রথম গুরুত্বপূর্ন স্টেপ ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “সত্যি বলতে, মক্সির আরো বহু ধরনের জটিল ম্যাকানিজম রয়েছে। তবে একে যত কঠিন কাজকর্মই করতে হোক না কেন, এই যন্ত্রের মাধ্যমেই ভবিষ্যতে মানুষ মঙ্গল গ্রহে পারি জমাতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।”
“অক্সিজেন আমরা শুধুমাত্র প্রশ্বাসের জন্যই গ্রহণ করি তা কিন্তু নয়। মানুষ ছাড়াও, রকেট প্রোপেল্যান্ট একমাত্র অক্সিজেনের উপরই নির্ভর করে চালনা করা হয় এবং ভবিষ্যতে মানুষ জাতির মঙ্গল গ্রহ থেকে পুনরায় পৃথিবীর পথে পারি জমাতে এই প্রোপেল্যান্টের ওপরই নির্ভর করতে হবে।”
লাল রঙের গ্রহটির বায়ুমণ্ডল প্রচুর বিষাক্ত। কেননা মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৯৫ শতাংশ জুড়ে রয়েছে এক প্রকার শীতল এবং শুষ্ক কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের আবরণ। বলাই বাহুল্য ঠিক এই কারণেই পৃথিবীর মানুষ ধারণা করে থাকে যে মঙ্গলের পৃষ্ঠ মানব জাতির বসবাসের অনুপযোগী। বর্তমানে পৃথিবীতে অক্সিজেন গ্যাসের পরিমাণ রয়েছে পুরো বায়ুমণ্ডলের প্রায় ২১ শতাংশ; অন্যদিকে মঙ্গল গ্রহে রয়েছে ০.১ শতাংশেরও কম।
এমতাবস্থায় মঙ্গল গ্রহে বসবাসের উপযোগী অক্সিজেন গ্যাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম এবং ভবিষ্যতে পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহে যাতায়াতের জন্য রকেটের জ্বালানি হিসেবেও অক্সিজেন গ্যাসের অনেক প্রয়োজন। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায়, পৃথিবী হতে এত অক্সিজেন পরিবহন করে মঙ্গল গ্রহে আনা প্রচুর ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
এরই ধারাবাহিকতায়, বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় মক্সি নামক যন্ত্রটি মঙ্গল গ্রহে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণে আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে, যা পৃথিবীবাসীর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নতুন এক দিক উন্মোচন করেছে। উল্লেখ্য, মক্সি আবিষ্কারের পূর্বে বিশেষজ্ঞরা বায়ুর কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসকে ভেঙে এবং প্লাজমা ব্যবহারের মাধ্যমে মঙ্গলের পৃষ্ঠের উপর থাকা ঘোলাটে তরল সদৃশ বস্তুকে অক্সিজেনে এবং হাইড্রোজেনে রূপান্তর করার বিষয়টি বিবেচনা করেছিলেন যা এখনও পরীক্ষাধীন রয়েছে।
হাসান সৈকত/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ Oxygen has been created on Mars for the first time in space history | Euronews