বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মত দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীকে সঙ্গমরত অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন, যারা কিনা সম্মতি নিয়েই একে অপরের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করছিলো!
“জাপানী পুরুষ মাকাক বানর (Macaque Monkey) এবং মহিলা সীকা (Sika Deer) হরিণের আন্তঃপ্রজাতি ভিত্তিক যৌন আচরণ” শীর্ষক গবেষণাপত্রে ঘটনাটি বর্ণনা করা হয়েছে, যা কিনা দুটি ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের রেকর্ড করা প্রথম দৃষ্টান্ত। ২০১৭ সালে ঘটনাটি ঘটে জাপানের ইয়াকোশিমা দ্বীপে।

ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীদের মধ্যে যৌনতার খবর বিস্তৃত পরিসরে দেখা গেলেও, সেগুলো কেবল এমন সব প্রাণীদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল যারা কিনা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত এবং দেখতে একইরকম। এই ব্যতিক্রম ঘটনাগুলো মূলত এমন সব প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায় যারা কিনা বন্দী অবস্থায় জন্ম নেয় এবং বন্দী অবস্থাতেই জীবন যাপন করে।
এসব ঘটনার যত উদাহরণ রয়েছে তার বেশিরভাগই হলো যৌন হয়রানি। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানীরা এর আগে অ্যান্টার্কটিক ফার সিল (Antarctic Fur Seal) দ্বারা কিং পেঙ্গুইনদের (King Penguin) হয়রানির শিকার হওয়া পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।

তবে নতুন গবেষণাপত্রে উল্লেখিত বন্য প্রাণী দুটি হলো- একটি পুরুষ জাপানী মাকাক এবং একটি মহিলা সীকা হরিণ। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোনো জবরদস্তি পরিলক্ষিত হয়নি এবং উভয় প্রাণীই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সঙ্গম করছিলো।
গবেষকরা বলেছেন, “বানরটি বেশ কয়েকটি মহিলা হরিণের প্রতি স্পষ্ট যৌন আচরণ দেখিয়েছিল। এই হরিণগুলির মধ্যে কয়েকটি হরিণ পালানোর চেষ্টা করলেও, অন্যরা বানরের আচরণের সাথে সম্মতি দিয়েছিল।”
গবেষকরা লিখেছেন, “একটি হরিণ, মাকাক দ্বারা সংঘটিত যৌন আচরণ মেনে নিয়েছিল এবং এটি সম্ভবত তার পিঠে জমা হওয়া বানরের শুক্রাণুকে চাটছিল। অন্য একটি হরিণ মাকাকটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং মাকাকটিকে তার পিছনে ফেলে দিয়েছিল।”
বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে এমন অদ্ভুত আচরণের সব থেকে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হলো “সাথী বঞ্চনা” বা বলা যায় “বিয়োগ বেদনা”। এটি এমন একটি তত্ত্ব যা অনুযায়ী, যে যে প্রাণীদের মধ্যে তাদের স্ত্রীদের অ্যাক্সেস নেই তারা এমন আচরণ দেখানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে।
বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন, দুটি প্রাণী ইতিমধ্যে একসাথে খেলাধুলা এবং একে অপরকে সহযোগিতা করে আসছিলো। পাশাপাশি মাকাকরা তাদের প্রজনন মৌসুমেও প্রবেশ করছিলো। সম্ভবত তারা উভয়ই এই বিষয়গুলো দ্বারা উৎসাহিত হতে পারে। ঘটনাটি হতে পারে তাদের মধ্যে এতদিন পর্যন্ত চলা অন্তরঙ্গতার বহিঃপ্রকাশ।

অন্য এক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, তাদের আচরণটি সঙ্গম শেখার একটি উপায়। তবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এটি সম্ভাব্য নয় যে তারা সামাজিক প্রাণী এবং একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারে। তাদের সাথীর অভাব হওয়ায় তারা অন্য প্রজাতির সাথে যৌন মিলন করবে এমনটাও অসম্ভব- কারণ এমন কিছু হলে তারা হস্তমৈথুন করে অথবা নিজ প্রজাতির মধ্যে সমকামী আচরণ দেখায়।
সাধারণত, কাছাকাছি চেহারার প্রাণীদের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটে থাকে। কারণ অনেক সময় কিছু প্রাণী অপর প্রাণীটি তার গোত্রের কিনা তা নিয়ে ভুল করে বসে। কিন্তু ব্যাখ্যাটি নতুন ঘটনাটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কেননা এক্ষেত্রে প্রাণী দুটি চেহারার দিক দিয়ে কোনোভাবেই কাছাকাছি পর্যায়ের না।
বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, আরও অধ্যয়ন এর মাধ্যমে আন্তঃপ্রজাতির মধ্যে কীভাবে সঙ্গম ঘটে তা জানা যেতে পারে এবং কিছু মানুষ কেন প্রাণীদের প্রতি যৌন আগ্রহ দেখায় তাও হয়তোবা এর মাধ্যমে উদঘাটন করা সম্ভব হবে।
২০১৯ সালে মহিলা বানর এবং সীকা হরিণের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ঘটনাও পরিলক্ষিত হয়।
কায়েস মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ দি গার্ডিয়ান, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, লাইভ সাইন্স, ইন্ডিপেন্ডেন্ট
+1
27
+1
11
+1
16
+1
61
+1
39
+1
20
+1
65