গবেষকরা বলেছেন- দিনের বেলার একটু ঘুম আমাদের দিতে পারে নতুন কাজের প্রাণশক্তি। দিনের বেলা, বিশেষ করে বিকালের হালকা ঘুম আমাদের মেজাজকে শুধু চাঙ্গা করে এমনটা নয়, বরং আমাদের বেশিদিন বাঁচতেও সহায়তা করে।
গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত দুপুর বা বিকালে ২০-৩০ মিনিট ঘুমালে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস পায়। গবেষকরা গ্রিসের একটি হাসপাতালের কিছু রোগীদের নিয়ে গবেষণা করেন। সেখানে তারা দেখেন যেসকল রোগী প্রতিদিন হেড ডাউন বা মাথা ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েছেন তাদের ব্লাড প্রেশার বা রক্তচাপ পূর্বের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে।
গবেষকরা বলেছেন, প্রাপ্ত বয়স্ক বা বয়স্ক যে কোনো ব্যক্তি দিনের বেলা একটু ঘুমিয়ে নিলে অনেক উপকার পাবে। কার্ডিওলজিস্ট মনোলিস কালিস্ট্রাটোস বলেন, “যে কোনো ব্যক্তি অল্প সময়ের জন্য দিনের বেলা একটু ঘুমিয়ে নিতে পারে, এর বিনিময়ে তার কোনো খরচ করতে হয় না।” তিনি আরও বলেন, “কেউ যদি নিয়মিত দিনের বেলা ঘুমায় তাহলে তার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।”
গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিদিন দিনে গড়ে ২o মিনিট ঘুম রক্তচাপ কমাতে খুব সহায়ক। ঔষুধ যেমন রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে ঠিক তেমনি দিনের বেলার একটুখানি ঘুমও রক্তচাপ কমাতে ঔষুধের মতো কাজ করে।
সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়মিত দুপুরে ঘুমালে আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যা দূর হতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, দুপুরে যারা নিয়মিত ঘুমায় এবং যারা ঘুমায় না তাদের উভয়ই গড়ে রাতে ৬.৫ ঘণ্টা ঘুমায়। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, দুপুরের খাওয়ার পরে ঘুম ২ ঘণ্টার বেশি হওয়া উচিত নয়। আর আমাদের শারীরিক ও মানসিক উত্তেজনা হ্রাস করতে একটুখানি ঘুমই যথেষ্ট।
ঘুমের ঔষুধ বিশেষজ্ঞ এবং স্লিপ ফাউন্ডেশনের সদস্য ডাঃ অভিনব সিং হেলথলাইনকে বলেছেন, গবেষণায় দেখা যায় বিকালের ঘুম মানসিক চঞ্চলতা বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। দিনের বেলার ঘুম আমাদের “হোমিওস্ট্যাটিক স্লিপ ড্রাইভ” হ্রাস করে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘসময় অনাহারে থাকার পরে শরীরকে পুনরায় সক্রিয় করতে যেমন খাদ্য প্রয়োজন, ঠিক তেমনি সারাদিন সক্রিয় থাকার জন্য দিনের বেলা একটু ঘুম প্রয়োজন। দিনের বেলা ঘুমানোর কিছু উপকারিতা রয়েছে। যেমন-
- নিদ্রাহীনতা হ্রাস পায়।
- শিক্ষার উন্নতি হয়।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
- অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
গবেষকরা বলেছেন, বিকালের ঘুম আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিকালে ঘুম আমাদের মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয় এবং প্রতিদিনের চিন্তাভাবনা থেকে চাপমুক্ত রাখে।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, “দিনের বেলা ঘুমানোর জন্য উপযুক্ত সময় দুপুর ১-৩ টা। এই সময় ১o-৩o মিনিট ঘুমিয়ে নিলে মস্তিষ্ক অধিক বিশ্রাম পায় এবং সারাদিন চাপমুক্ত থাকে।”
আবার, অনেকে দুপুর বা বিকেলের ঘুমের বিপক্ষেও বলেছেন।
তারা মনে করেন, রাতে অপর্যাপ্ত ঘুম বা অলসতার কারণেও অনেকে দিনে ঘুমিয়ে থাকে।
কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা যায়, ৬o বছরের বেশি বয়সের কোনো ব্যক্তি যদি বিকালে একটু ঘুমায় তাহলে তার মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি মানসিক চিন্তাভাবনাও তীক্ষ্ণ হয়।
সম্প্রতি জেনারেল সাইকিয়াট্রি জার্নালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে চীনের বড় বড় শহরের ৬o বছর বয়সের ২২১৪ জন ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণা করা হয় এবং তাদের শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। সেখানে দেখা যায় ১৫৩৪ জন নিয়মিত বিকালে ঘুমাতো এবং বাকি ৬৮o জন ঘুমাতো না। তাদের মিনি মেন্টাল স্টেট অর্থাৎ MMSE পরীক্ষা করা হয়।
পরীক্ষায় দেখা যায়, যেসকল ব্যক্তি বিকালে ঘুমাতো তাদের স্মৃতিবিভ্রম দূর হয়েছে, মনোযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে, সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আশেপাশের প্রতি সচেতনতা ও পূর্বের তুলনায় উন্নত হয়েছে।
“হেলথলাইন” এর প্রতিবেদনে জেভো হেলথ কল্যাণ এর পরিচালক ডাভিনা রামকিসুন বলেন, “আমাদের দক্ষতার সাথে ঘুমের সম্পর্ক রয়েছে। ঘুম মস্তিষ্ক থেকে বার্ন আউট করে এবং তথ্যের ওভারলোড থেকে মস্তিষ্ককে মুক্ত রাখে। ঘুমানোর ফলে মস্তিষ্ক থেকে অপ্রয়োজনীয় তথ্য গুলো পরিষ্কার হয় এবং নতুন তথ্য সঞ্চয় করার জন্য মস্তিষ্ক পুনরায় প্রস্তুত হয়।
সুুতরাং, আমাদের উচিত প্রতিদিন কাজের ফাঁকে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও একটু ঘুমিয়ে নেওয়া।