ডাঃআবিদুর রাহমান ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র পোস্ট ডক্টরাল গবেষক এবং জাপানে পারমাণবিক শক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন জাপানের আইওয়াত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্ল্যাণ্ট বায়ো সায়েন্স বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তিনি ৩ টি বিখ্যাত বিজ্ঞান জার্নালে সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত আছেন। উল্লেখিত জার্নালগুলো হলো-PLOS ONE, Journal of Plant Growth Regulation এবং Frontiers in Plant Science.
২০১৭ সালের প্রথম দিকে উদ্ভিদবিজ্ঞানী ডাঃ আবিদুর রাহমান ঢাকায় একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, জাপানে তার গবেষক দলটি মাটির দূষিত পদার্থ শোষণ করার জন্য গাছের আণবিক প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে। দীর্ঘ ৪ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর এই বাংলাদেশী বিজ্ঞানী তার গবেষক দলের সহায়তায় ফাইটোরেমিডিয়েশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে দূষিত মাটি পরিষ্কার করার পদ্ধতি বিশ্বকে দেখান।
[মাটি থেকে দূষিত পদার্থ অপসারণ করে সরাসরি সবুজ উদ্ভিদ ব্যবহার করার প্রক্রিয়াকে ফাইটোরেমিডিয়েশন বলে।]
১২ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল মলিকুলার প্ল্যান্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে জাপানের আইওয়াত বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করে, ডাঃ আবিদুর রাহমানের নেতৃত্বে একটি দল বিশ্বে প্রথমবারের মতো পটাশিয়াম- মুক্ত সিজিয়াম ট্রান্সপোর্টার আবিষ্কার করে এবং ফাইটোরেমিডিয়েশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে দূষিত মাটি পরিষ্কার করার সম্ভাব্যতা প্রকাশ করে।
বিজ্ঞানী ডাঃ আবিদুর রাহমান যখন তার দলের সাফল্য অর্জনের জন্য জাপানি এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়া গুলোতে সাক্ষাৎকারে ব্যস্ত ছিলেন তখন তাকে একটি প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নটি ছিল -পটাশিয়াম মুক্ত সিজিয়াম ট্রান্সপোর্টার আবিষ্কার দ্বারা তিনি বিশ্বকে কি বুঝাতে চেয়েছেন?
প্রশ্নটির উত্তরে তিনি বলেন, পারমাণবিক দুর্ঘটনায় তেজস্ক্রিয় সিজিয়াম মাটিতে জমা হয় এবং মাটি দূষণের ফলে মারাত্নক সমস্যার সৃষ্টি হয়। মাটি দূষণকারী অন্যান্য বিষাক্ত ধাতু হচ্ছে- ক্যাডমিয়াম এবং আর্সেনিক। তিনি আরও বলেন, সিজিয়াম উদ্ভিদে শোষিত হতে পারে পটাসিয়াম ট্রান্সপোর্টার ব্যবহার করার মাধ্যমে। পটাসিয়াম যেহেতু একটি প্রয়োজনীয় উপাদান, তাই মাটি থেকে সিজিয়াম শোষণ করার জন্য যখন অধিক পরিমাণে পটাসিয়াম ব্যবহার হয়, তখন মাটিতে পটাসিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়। ফলস্বরুপ, এমন একটি পরিবেশ তৈরি হবে যেখানে কোনো গাছপালার বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।
ইত্যেমধ্যে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে, ১৯৮৬ সালে ইউক্রেন এবং ২o১১ সালে জাপানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুর্ঘটনার ভয়াবহতা। এই দুর্ঘটনার ফলস্বরুপ, তেজস্ক্রিয় সিজিয়াম ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের জমি, নদী, গাছপালা, পশুর খাদ্যে। শেষ পর্যন্ত মানুষের খাদ্যেচক্রে এবং বাস্তুতন্ত্রে ও পাওয়া যায় তেজস্ক্রিয় সিজিয়াম। ডাঃ আবিদুর রাহমান তার নাম অনুসারে আইওয়াত বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে ‘দ্য আবিদুর ল্যাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে তার গবেষক দলটি ABCG 33 এবং ABCG 37 নামের দুটি প্রোটিন আবিষ্কার করে। এই দুটি প্রোটিন উদ্ভিদকে সাহায্যে করে তেজস্ক্রিয় সিজিয়াম গ্রহণ করতে।
ডাঃ আবিদুর রাহমান আশা করেন, তিনি তার গবেষণা দলটির সহায়তায় খরা- সহনশীল উন্নত জাতের ফসল আবিষ্কার করতে সক্ষম হবেন। তার গবেষণা দলের অন্য সদস্যরা হলেন- টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেইতারো তনোই এবং রিওহি সুগিতা, শিমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর তাকাশি আকিহিরো এবং আইওয়াত বিশ্ববিদ্যালয়ের মোঃ আরিফ আশরাফ, সায়াকা কুমাগা এবং কেইতা ইতো।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ ঢাকা ট্রিবিউন