অনেক সেলিব্রেটি এবং রাজনীতিবিদকেই প্রায়শই ফেসবুকের চেয়ে টুইটার-এ বেশি সক্রিয় দেখা যায়। কাহিনী কি আসলে?
হ্যাঁ, এটি সত্যি যে ফেসবুকেও অনেক সেলিব্রেটি সক্রিয় রয়েছেন তবু টুইটার-ই সম্ভবত এই দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছে। চলুন জেনে নিই, কেন:
1. টুইটারে সেলিব্রেটিদের টুইট সহজেই অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়
টুইপল (যারা টুইটার ব্যবহার করেন) সেলিব্রেটিদের পোস্ট গুলোই শেয়ার করার সম্ভাবনা বেশি। এর অর্থ এই নয় যে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সেলিব্রেটিদের স্ট্যাটাস ভাইরাল করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তবে টুইটারের তুলনায় ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো কঠিন।
২. ফেসবুক এবং টুইটারের বিধিনিষেধে পার্থক্য
ফেসবুক আপনাকে শুধুমাত্র ৫০০০ জন মানুষের সাথে যুক্ত হতে দেয়। এমনকি সেলিব্রেটিদের পার্সোনাল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকলেও তারা ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট গ্রহণ করেন না। যার অর্থ হলো ফ্যানরা তাদের আপডেটগুলি জানতে পারলেও, পোস্টগুলোতে কোনও মন্তব্য করতে পারবে না। কিন্তু টুইটারে এই সমস্যাটি নেই।
আবার ফেসবুক ফ্যান পেইজের সমস্যা হলো, যদি মেসেজ অপশন খোলা থাকে; হাজার হাজার স্প্যাম মেসেজ আসে। অন্যদিকে, টুইটার ফলোয়ারদের মোটেই সরাসরি মেসেজ প্রেরণ করতে দেয় না।
![টুইটার](https://www.sciencebee.com.bd/daily-science/efylucmy/2021/03/105866371-1556028303346gettyimages-1060578038-1.jpeg)
৩. টুইটারের ইন্টারফেইস সাধারণ ব্যবহারকারী এবং সেলিব্রেটিদের জন্য বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ
টুইটার ব্যবহারকারীরা কোনও সেলিব্রেটিকে অনুসরণ করুক বা না করুক, তাদের সবসময়-ই যে কারও টুইট পড়ার অ্যাক্সেস রয়েছে এবং তা তারা রি-টুইট করতে পারে।
অন্যদিকে, ফেসবুকে, পেইজ গুলো স্প্যামের ঝুঁকিতে থাকে বেশি। স্প্যামগুলো এড়াতে টুইটার ব্যবহার করেন অনেক সেলিব্রিটি।
৪. সেলিব্রেটিদের সাথে কানেক্ট করা টুইটারে তুলনামূলকভাবে সহজ
ফেসবুকের চেয়ে টুইটারে সেলিব্রেটি, রাজনীতিবিদ, প্রভাবশালী এবং বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলা বেশি সহজ। কোনও সেলিব্রেটির ফেসবুক পোস্টে আপনার মন্তব্য অনেক নিচে চাপা পরে যেতে পারে। তবে টুইটারে আপনার রি-টুইটটি পৃথকভাবে দেখানো হয়।
টুইটারে দারুণ দারুণ গ্রাহক রয়েছেন, যারা টুইটার চ্যাটগুলি (বা ইন্টারঅ্যাকশনগুলি) আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলেন।
৫. কেন সংবাদ মাধ্যম বা গসিপ ওয়েবসাইটগুলো টুইটগুলোকে ব্যবহার করে?
আপনি যদি কোনও সংবাদ বা গসিপ ওয়েবসাইটের পাঠক হন তবে আপনি লক্ষ্য করেছেন যে, তারা রাজনীতিবিদ এবং সেলিব্রেটিদের ফেসবুকের স্ট্যাটাস আপডেট নয় বরং তাদের টুইটগুলি উদ্ধৃত করেন।
ভাবছেন কেন এমন করা হয়? কারণ- একবার পোস্ট করা টুইট এডিট করা যায় না, পুরোপুরি মুছে ফেলা ছাড়া গতি নেই। এই কারণে প্রেস এবং মিডিয়াগুলো প্রায়শই রাজনীতিবিদদের টুইটগুলি উদ্ধৃত করেন তবে ফেসবুকের স্টেটাসকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেন না।
কিন্তু কথা হলো, টুইটার এ পোস্টকৃত টুইটগুলো আসলে কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য?
অদিতি গুপ্ত, হেমঙ্ক লাম্বা এবং পোন্নরঙ্গম কুমারগুরু টুইটার নিয়ে একটি গবেষণাপত্র তৈরি করেছিলেন। গবেষণাপত্রটি ছিলো টুইটারের নকল টুইট গুলো নিয়ে।
গবেষকরা টুইটারের API গুলি ব্যবহার করে, এপ্রিল ২০১৩-এ বোস্টন ম্যারাথন বিস্ফোরণের ৪৫ মিনিটের পরে, ৩.৭ মিলিয়ন টুইটার ব্যবহারকারীদের ৭.৯ মিলিয়ন টুইট বিশ্লেষণ করেছেন।
প্রথম টুইটটি ঘটনার ৩ মিনিটের মধ্যে পোস্ট করা হয়েছিলো এবং প্রথম ছবিটি বিস্ফোরণের ৪ মিনিটের মধ্যে পোস্ট করা হয়।
গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন:
টুইটারে ২৯% কন্টেন্ট-ই ছিল গুজব এবং নকল। এগুলো ছিল সবচেয়ে বেশি ভাইরাল। পাশাপাশি, অনেক হাই প্রোফাইল এবং ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট সহ বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারী গুজবগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী ছিলেন। ৭৫% ভুয়া টুইট-ই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল।
বিস্ফোরণের পরের প্রথম ঘন্টাতে ভুয়া টুইটগুলি আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেয়েছিল কারণ প্রথমদিকে তুলনামূলক কম বিশ্বাসযোগ্য এবং অল্প পরিচিত ব্যবহারকারীরা টুইটগুলো করেছিলেন। কিন্তু যখন হাই প্রায় প্রোফাইল যুক্ত টুইটার ব্যবহারকারীরা টুইটগুলো রিটুইট করা শুরু করেন, টুইটগুলো দ্রুত ভাইরাল হওয়া শুরু হয়।
টুইটারে থাকা টুইটগুলোর ৫১% ছিলো সাধারণ ধারণা এবং মন্তব্য। ২০% টুইট ছিল সত্য তথ্য।
বোস্টনের ঘটনাটি চলাকালীন অবস্থায় ৬০০০ এরও বেশি ফেইক টুইটার অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়েছিল এবং যা পরে টুইটার কতৃপক্ষ বাদ দিয়েছিলেন।
ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট
টুইটারের সিইও জ্যাক ডর্সি এনএফটি (একপ্রকার ডিজিটাল সংগ্রাহক আইটেম) হিসেবে বিশ্বের সর্ব প্রথম প্রকাশিত টুইটটি বিক্রি করছেন।
![টুইটার](https://www.sciencebee.com.bd/daily-science/efylucmy/2021/03/20210321_150018-1.jpg)
ডর্সি শুক্রবার “ভ্যালুয়েবলস” নামক একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের লিঙ্কের সাথে একটি টুইট শেয়ার করেছেন যা তাদের নির্মাতাদের দ্বারা তোলা ট্যুইটগুলি কেনা এবং বেচার অনুমতি দেয়।
নিলামে তোলা টুইটটি হলো ২০০৬ সালের ডরসির করা প্রথম টুইট, যা ছিলো- “just setting up my twttr”.
টুইটটি নিলামে এখন পর্যন্ত ২.৫ মিলিয়ন ডলারে পৌছেছে।
কায়েস মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ precog.iiitd.edu, heidicohen.com, smartearningmethods.com, cnn.com
+1
+1
1
+1
2
+1
10
+1
2
+1
3
+1
1