“কোন কাজটি স্বাভাবিক? আর, কোন কাজটি স্বাভাবিক নয়?” মানসিক-স্বাস্থ্য সহায়িকার সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশের সাথে সাথে ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকাল ম্যানুয়াল অফ মেন্টাল ডিসঅর্ডারস (ডিএসএম), লাইভসায়েন্স দ্বারা চিহ্নিত কিছু মানসিক অস্বাভাবিকতার উপর বিশেষ নজর আরোপ করে। সেখানে উল্লিখিত প্রশ্নটি একটি মৌলিক জিজ্ঞাসা হিসেবে প্রাধান্য পায়।
মানসিক স্বাস্থ্য সহায়িকার নতুন সংস্করণে জড় বস্তু যেমন জুতা, এই জাতীয় জিনিসের প্রতি যৌন আকর্ষণকে ফেটিশ ডিজঅর্ডার বা আচ্ছন্নতা ব্যাধি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে সেটা তখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে যখন তা কিছু নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণে সক্ষম হবে। যেমন ব্যক্তির উল্লেখযোগ্য বিপর্যয় ঘটানো বা অন্যের ক্ষতিসাধন ইত্যাদি।
অনেকেই হয়তো জুতা বা অন্যান্য পরিধেয় বস্ত্রের প্রতি যৌন আকর্ষণকে অস্বাভাবিক বা অপ্রাকৃত বিবেচনা করবেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে এটি কি কোন মানসিক রোগ? মানসিক-স্বাস্থ্য সহায়িকার নতুন সংস্করণ, ডিএসএম- ৫ এর উত্তরে শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, এটি হতে পারে মানসিক রোগ, তবে হতেই হবে এমনটি নয়। ডিএসএম এর তথ্য অনুযায়ী একজন ফেটিশ ব্যাক্তি একাধিক সংবেদন গ্রহণে সক্ষম। এধরনের ব্যক্তিরা তাদের যৌনসঙ্গীকে স্বাদ, গন্ধ ইত্যাদি নানাবিধ সংবেদন গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের জিনিসটি পরিধানের জন্য জোর করতে থাকেন। এমনকি অনেক সময় পুরুষেরা ওই নির্দিষ্ট জড়বস্তুর অনুপস্থিতিতে নিজেদের যৌন ক্ষমতা সক্রিয় করতেও অপারগ হয়ে পড়েন। তবে ডিএসএম এর সর্বশেষ সংস্করণে পা কিংবা চুলের মত শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গগুলোর প্রতি তীব্র প্রেমমূলক আকর্ষণকেও ফেটিশিসমের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
ফেটিশিসম বা জড় বস্তুর প্রতি এই আকর্ষণ বেশকিছু অস্বাভাবিক আকর্ষণের মধ্যে একটি। এটি প্যারাফিলিয়াস নামে পরিচিত, যা পরবর্তীতে মানসিক বিকারগ্রস্ততাতে রুপান্তরিত হতে পারে। তবে ডিএসএম-৫ তাদের পূর্ববর্তী সংস্করণে এর সাথে নিছক বাতিকগ্রস্ততা এবং মানসিক অসুস্থতাকে নিখুঁতভাবে ব্যাখ্যা করেছে।
বস্তুর প্রতি এই অস্বাভাবিক আকর্ষণ উক্ত ব্যক্তির জন্য সংকটময় হয়ে দাঁড়ায় যখন তা কাজ করার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া কিংবা অন্যের ক্ষতিসাধন করে। তখন তা নিছক বাতিকগ্রস্ততা থেকে মানসিক অসুস্থতার দিকে মোড় নেয়।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোন ব্যক্তি জুতার প্রতি যদি এতটাই নিয়ন্ত্রণহীন হোন যে নিজের চাকরিও ধরে রাখতে পারছেন না এবং অন্যদের জুতা চুরি করতে শুরু করেছেন তখন এই অস্বাভাবিকতাকে মানসিক ব্যাধি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ ব্যক্তি যখন স্বাভাবিক কার্যকলাপের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখনই তার সাথে ‘ডিসঅর্ডার’ বা ‘ব্যাধি’ শব্দটি জুড়ে দেয়া হয়।
প্রকৃতির স্বাভাবিকতাকে উপেক্ষা করে অস্বাভাবিকতাকে বয়ে নিয়ে পথচলা কখনোই কোন সহজ কাজ নয়। কখনো কখনো একজন ফেটিশ ব্যক্তিও অস্বস্তিবোধ করতে পারেন এই ভেবে যে জড়বস্তুর প্রতি তার এই অস্বাভাবিক আকর্ষণ কোন সাধারণ ঘটনা নয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি কোন মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত। তার এই আকর্ষণ নিয়ন্ত্রণের মাঝে থাকলে তা কোনো সমস্যা নয়।