গতবছর এলএসডি মাদক সেবনে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা সারাদেশে তোলপাড় ফেলে দেয়। শুধু বাংলাদেশেই নয় সারাবিশ্বে এলএসডি একটি ভয়ঙ্কর মাদক হিসেবে পরিগণিত হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় মানসিক চিকিৎসায় এলএসডি এর ব্যবহার নিয়ে কিছু তথ্য উঠে আসে। তবে অবাক করা বিষয় হলো, মানসিক চিকিৎসায় এলএসডি ব্যবহার কিন্তু মোটেও নতুন কিছু নয়।
এলএসডি এর আবিষ্কার এবং ইতিহাস
![Science Bee Science News এলএসডি](https://www.sciencebee.com.bd/daily-science/efylucmy/2023/11/F1W9mW3GaBB8_gNSf-jyoG-300x214.webp)
সময়টা ১৯৩৮ সাল। রসায়নবিদ আলবার্ট হফম্যান, সুইস কোম্পানি Sandoz এর গবেষণাগারে গবেষণায় মগ্ন ছিলেন। তিনি ‘Lysergic acid‘ থেকে উদ্ভূত বিভিন্ন যৌগসমূহ নিয়ে গবেষণা করছিলেন।
তিনি ইতোমধ্যেই ‘Lysergic acid’ উদ্ভূত ২৪ ধরনের যৌগের সংশ্লেষণ (একাধিক পদার্থের মিশ্রণে নূতন পদার্থের সৃষ্টি) ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। পুনরায় চেষ্টার মাধ্যমে তিনি ডাইইথাইলঅ্যামিন ব্যবহার করে আরও একটি যৌগকে সংশ্লেষিত করেন। ২৫ তম যৌগটি ছিলো ‘Lysergic acid diethylamide’ বা সংক্ষেপে LSD-25, যাকে আমরা এলএসডি হিসেবেই বেশি জেনে থাকি।
![Science Bee Science News এলএসডি](https://www.sciencebee.com.bd/daily-science/efylucmy/2023/11/The-chemical-structure-of-LSD-708x506-1-300x214.webp)
প্রথম দিকে Sandoz এর অন্যান্য গবেষকেরা এলএসডি কে খুব একটা গুরুত্বের চোখে দেখেননি। ফলস্বরূপ সে গবেষণা সেখানেই থেমে যায়।
কিন্তু হফম্যান কোনভাবেই এলএসডি এর চিন্তা তার মাথা থেকে ফেলতে পারছিলেন না। তিনি মানুষের মধ্যে পদার্থটির প্রভাব নিয়ে
জানতে আগ্রহী ছিলেন। ফলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এই পরীক্ষাটা তিনি নিজের উপর-ই চালাবেন।
১৯ এপ্রিল, ১৯৪৩ সালে হফম্যান এলএসডি এর ১ মিলিগ্রামের একচতুর্থাংশ নিয়ে নিজের দেহে প্রবেশ করান। প্রায় চল্লিশ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর তার দেহে পদার্থটির প্রভাব দেখা দিতে শুরু করে। তিনি হ্যালুসিনেশনে ভুগতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে তিনি অনুভব করেন তার সমস্ত শরীর যেন অবশ হয়ে আসছে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখতে পান তার কিছুই হয়নি। তাছাড়া পরবর্তীতে তিনি কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারও শিকার হননি।
![Science Bee Science News এলএসডি](https://www.sciencebee.com.bd/daily-science/efylucmy/2023/11/lsd_side_effects-1-300x225.jpg)
১৯৪৭ সালে Sandoz কোম্পানি সর্বপ্রথম এলএসডি কে মানসিক রোগের ওষুধ হিসেবে বাজারে ছাড়ে। ১৯৬০ এর দিকে এলএসডি সারাবিশ্বে তুমুল জনপ্রিয় একটি সাইকেডেলিক ড্রাগে (যেসব ড্রাগ মানুষের মধ্যে হ্যালুসিনেশন সৃষ্টি করে) পরিণত হয়। মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ‘টিমোথি লেরি’ তো LSD কে মানসিক ও আত্মিক পূর্ণতা লাভের একটি পথ হিসেবে দাবি করে বসেন।
তবে ১৯৬০ এর দশকের মাঝামাঝি এসে এলএসডি এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ উঠতে থাকে। ফলে মার্কিন সরকার এর ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে এর বিক্রি অবৈধ ঘোষণা করা দেয়।
এলএসডি বিষয়ক নতুন গবেষণা সমূহ
মানব মস্তিষ্ক নির্দিষ্ট কিছু বয়স পর্যন্ত সহজেই নানা জিনিস শিখতে পারে বা নানা বিষয়ে দক্ষ হতে পারে। সে বয়সটি পেরিয়ে গেলে মানুষের জন্য নতুন কিছু শেখা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময়টাকে মস্তিষ্কের ‘ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড’ বলে।
এর একটি অন্যতম উদাহরণ হলো, প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর নতুন ভাষা শিখতে মানুষ প্রচুর জটিলতার শিকার হয়। কৈশোর পর্যন্ত মানুষ তুলনামূক সহজেই ভাষাগত জ্ঞানগুলোকে আয়ত্তে আনতে পারে। কিন্তু সে বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পর মানুষ নিজের সেই সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
![Science Bee Science News এলএসডি](https://www.sciencebee.com.bd/daily-science/efylucmy/2023/11/Module-6_p04-e1700290200420-300x209.jpg)
সম্প্রতি Nature জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে কৌতূহলোদ্দীপক একটি ঘটনা উঠে আসে। Johns Hopkins University এর একদল বিজ্ঞানী পূর্ণবয়স্ক কিছু ইঁদুরের উপর সাইকেডেলিক ড্রাগ দিয়ে পরীক্ষা চালান। সাইকেডেলিক ড্রাগ হিসেবে LSD ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া পরীক্ষাটিতে শুধুমাত্র সেসব ইঁদুরকেই বাছাই করা হয় যাদের মধ্যে অন্যান্য ইঁদুরের সাথে মিলেমিশে থাকার দক্ষতা বা সামাজিকতার অভাব রয়েছে। তাদের প্রত্যেককে এলএসডি এর একটি করে ডোজ দেওয়া হয়।
ডোজ নেওয়ার পর দেখা যায় বেশিরভাগ ইঁদুর একাকিত্বের চাইতে অন্য ইঁদুরগুলোর সাথে একত্রে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। ১০ ঘন্টা পর এলএসডি এর এই প্রভাব কেটে যায়। সপ্তাহখানেক এই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করানো হয়। আশ্চর্যজনকভাবে ডোস বন্ধের প্রায় মাসখানেক পরও ইঁদুরগুলো নিজেদের সমাজিকীকরণের দক্ষতায় উন্নতি ঘটাতে থাকে।
সাম্প্রতিক আরেক গবেষণায় দাবি করা হয়, অটিজমের চিকিৎসায়ও সাইকেডেলিক ড্রাগ কার্যকর। ৮ জন অটিজম আক্রান্তের উপর University of California কর্তৃক এ পরীক্ষা চালানো হয়। MDMA (3,4-Methylenedioxy methamphetamine) ড্রাগের ব্যবহার তাদের মধ্যে সামাজিক উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করেছে।
![Science Bee Science News এলএসডি](https://www.sciencebee.com.bd/daily-science/efylucmy/2023/11/09413-cover-mdmaboxweb-300x281.jpg)
এসব গবেষণা এখনও নিজেদের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সার্বিকভাবে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে এলএসডি এবং এর মতো অন্যান্য সাইকেডেলিক ড্রাগগুলো কতটুকু কার্যকরী প্রমাণিত হয় তা তো সময়-ই বলে দিতে পারবে।
আতিক হাসান রাহাত / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
+1
1
+1
+1
2
+1
+1
1
+1
2
+1