আমদের সৌরজগতেরই একটি সদস্য ইউরেনাস গ্রহটি। সূর্যের থেকে সপ্তম দূরবর্তী গ্রহ এটি। ১৩ মার্চ, ১৭৮১ সালে উইলিয়াম হার্সেলের টেলিস্কোপে প্রথম ধরা পরেছিল এই বৃহৎ নীল দানবীয় গ্রহটি। হার্সেলের এই খোঁজটি তাঁকে স্থায়ী জ্যোতির্বিজ্ঞানের খ্যাতি অর্জনে সাহায্য করেছিল।
এমনিতে গ্রহটি বেশ অদ্ভুদ। সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ না হলেও সব চেয়ে ঠাণ্ডা গ্রহ এটি। এর মধ্যে আর কোনো তাপ অবশিষ্ট নেই। পোলার রিজিয়নে সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় দেখার জন্য ৪২ বছর অপেক্ষা করতে হয়। আবার সূর্যের আলোতেও কয়েকদশক পার করতে হয়। এত এত ভৌগোলিক বৈচিত্র্য থাকার পরেও বিজ্ঞানীরা এই দানবকে নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি। সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে ভয়েজার-২ (Voyager-2) এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয় গ্রহটিকে, পাওয়া যায় বেশ কিছু তথ্য। হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেনের বায়ুমণ্ডল সাথে অনেকগুলো উপগ্রহ, এই সব কিছু নিয়েই ইউরেনাসের পরিবার।
তবে, এত বছর পর আবার নড়েচড়ে বসেছে নাসা। এবার ইউরেনাসের উদ্দেশ্যে একটি ফ্ল্যাগশিপ মিশন পরিচালনা করবে তারা। কিন্তু,
কেন মহাকাশ গবেষণার নতুন লক্ষ্য ইউরেনাস?
সূর্যের চারপাশের গ্রহগুলোকে ৩টি টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। এগুলো হচ্ছে:
- গ্যাস জায়ান্ট
- আইস জায়ান্ট এবং
- পাথুরে গ্রহ
আমাদের পৃথিবীও ৩য় গ্রুপের মধ্যে পড়ে । এখানে ২য় গ্রুপে রয়েছে ইউরেনাস এবং নেপচুন (৩য় গ্রুপে পাথুরে গ্রহ, যেমন- বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল; ১ম গ্রপে গ্যাসীয় দানব গ্রহ শনি, বৃহস্পতি)। এই দুই গ্রহ অত্যন্ত ঠান্ডা। স্বাভাবিকভাবেই এর অন্যতম কারণ সূর্য থেকে এদের দূরত্ব অনেক বেশি। এই গ্রহের জলবায়ু প্রচুর পরিমাণ মিথেন, পানি এবং অন্যান্য বরফ গঠনকারী মৌলের সমন্বয়ে গঠিত। তবে, এই বৈশিষ্ট্যটি কেবল এই দুই গ্রহেই নয়, গ্যালাক্সির অসংখ্য গ্রহে পরিলক্ষিত হয়। বিজ্ঞানী ফ্লেচার বলেন, “গ্যালাক্সির এত সংখ্যক গ্রহে এই বৈশিষ্ট্য থাকার কারণ কী? সময় এসেছে এখন এই রহস্য উদঘাটনের।”
ইউরেনাস গবেষণা:
পৃথিবী থেকে অনেক দূরে থাকায় ইউরেনাস নিয়ে গবেষণা করা বেশ কঠিন। যদিও এর চেয়েও দূরবর্তী অঞ্চলে মিশন পরিচালনা হয়, তবে ইউরেনাসের মত একটি গ্রহ যেটি ১.৮ বিলিয়ন মাইল বেগে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে, তার কক্ষপথে প্রবেশ করা চাট্টিখানি কথা না। তবে প্রচলিত নিয়মেই উক্ত গ্রহের আকর্ষণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সেখানে কোনো নভোযান পাঠানো হবে। এখন অপেক্ষা সঠিক সময়ের। হিসেব-নিকেশ করে দেখা গিয়েছে ২০৩১ থেকে ২০৩২ সালের মধ্যে একটি মিশন পরিচালনা করতে হবে। এর জন্য ৪ বিলিয়নের মত অর্থ খরচ করে নাসা প্রোব ডিজাইন করছে। প্রোবটি ইউরেনাসের বাইরের একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে চলবে এবং ইউরেনাস ও তার উপগ্রহের তথ্যাবলি পৃথিবীতে প্রেরণ করবে। প্রয়োজনে সহকারী প্রোবকে গ্রহে অবতরণ করানো হবে। শ্রীঘ্রই হয়তো মিলবে এই প্রশ্নের উত্তর “কেন মহাকাশ গবেষণার নতুন লক্ষ্য ইউরেনাস?”
ইউরেনাসের যাবতীয় খুঁটিনাটি বের করা হবে এই মিশনের মাধ্যমে। কেন গ্রহটির কোনো তাপ আর অবশিষ্ট নেই? প্রশ্নটির সঠিক উত্তর খোঁজা হবে। হয়তো সৌরজগতের আরো কিছু রহস্য ভেদ করা যাবে এই ইউরেনাসের মাধ্যমেই। আরোও সমৃদ্ধ হবে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাস !
তানভীর আহমেদ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান