যোগাযোগ এবং মনের ভাব প্রকাশের জন্য ভাষা ব্যবহার করা হয়। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব মন্ট্রিয়াল (Montreal) এর গবেষকদল জীবনের উৎপত্তির ক্ষেত্রেও দুটি আণবিক ভাষা আবিষ্কার করেন ও গাণিতিকভাবে এর সত্যতা যাচাই করেন।
মানবদেহকে অনেক গুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জৈব যন্ত্র দ্বারা গঠিত মনে হতে পারে। সেই জৈব যন্ত্রসমূহের জটিল সংগঠন একত্রিত হলে আমরা এক সচেতন (Conscious) সত্ত্বা পাই যে চলাচল করতে পারে, চিন্তা করতে পারে, জীবনযাপন করতে পারে এবং প্রজননে সক্ষম হতে পারে। এই আণবিক জৈব যন্ত্রগুলো নিজেদের মাঝে এই দুইটি ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমেই উৎপত্তি হয় জীবনের।
গবেষণাটির প্রধান গবেষক অ্যালেক্সিস ভ্যালী বেলিসলে (Alexis Vallée-Bélisle) বলেন যে,
“জীবনের উত্থানের চাবিকাঠি আণবিক ভাষা তথা সিগন্যালিং মেকানিজমের বিকাশের উপর নির্ভর করে। যা নিশ্চিত করে যে জীবের সকল অণু নির্দিষ্ট কাজগুলো একসাথে করছে। ন্যানো প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করার পথে অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে আরো জটিল এবং প্রয়োজনীয় কৃত্রিম ন্যানো প্রযুক্তি পরিকল্পনা এবং গঠন করার চাবিকাঠি হলো জীবন্ত প্রাণীদের দ্বারা আরো ভালোভাবে আণবিক ভাষা বোঝা এবং আরো ভালোভাবে আমাদের প্রচেষ্টা চালানোর ক্ষমতার উপর নির্ভর করে।”
আণবিক দুটি ভাষার পরিচিতি:
একটা খুবই পরিচিত আণবিক ভাষা হচ্ছে অ্যালস্টারি (Allostery)। এখানে একটি অণু অন্য অণুর সাথে আবদ্ধ হয়ে অণুর গঠন পরিবর্তন করে, যার দ্বারা কোনো কার্যকলাপকে শুরু করা হয় বা বাধা দেওয়া হয়।
আরেকটি কম পরিচিত আণবিক ভাষা হলো মাল্টিভ্যালেন্সি, যা চেলেট (Chelate) প্রভাব নামেও পরিচিত। এটি একটি ধাঁধার মতো কাজ করে যেখানে একটি অণু অন্যটির সাথে আবদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে এটি একটি তৃতীয় অণুর বন্ধনকে সহজ করে বা জটিল করে।
যদিও এই দুটি ভাষা সকল জীবের সকল আণবিক সিস্টেমে পরিলক্ষিত হয়, তবে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এই দুটি ভাষার নিয়ম এবং নীতিগুলো বুঝতে শুরু করেছেন। তাই এই ভাষাগুলোকে ব্যবহার করে অভিনব কৃত্রিম ন্যানো প্রযুক্তি ডিজাইন এবং প্রোগ্রাম করা শুরু হয়েছে।
প্রধান গবেষক অ্যালেক্সিস ভ্যালী বেলিসলে আরও বলেন যে,
“প্রাকৃতিক ন্যানো সিস্টেমের জটিলতার প্রেক্ষিতে এর আগে কেউ একই সিস্টেমে এই দুটি ভাষার মৌলিক নিয়ম, সুবিধা বা সীমাবদ্ধতা তুলনা করতে সক্ষম ছিল না।”
এটির জন্য গবেষণাটির প্রথম লেখক ডমিনিক লযন (Dominic Lauzon) এঁর মাথায় একটি ডিএনএ-ভিত্তিক আণবিক সিস্টেম তৈরি করার বুদ্ধি আসে যা উভয় ভাষা ব্যবহার করে কাজ করতে পারে। তিনি বলেন যে,
“ডিএনএ ন্যানো ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য লেগো ব্রিকসের এটি একটি অসাধারণ অণু যা সহজ, প্রোগ্রামযোগ্য এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য রসায়নের প্রস্তাব করে।”
ডিএনএ তে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে মানবজাতি এখনও নতুন। ন্যানোপ্রযুক্তির বিকাশ সাধন এবং ডিএনএ তে এর ব্যবহার প্রয়োগ করে মানবজাতিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
হাসিবুল ইসলাম সৌরভ / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র : সাইটেকডেইলি, সাইন্সডেইলি, জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি
+1
+1
+1
1
+1
+1
1
+1
+1