ভিন্ন মহাবিশ্বে ভিন্ন ধরনের পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র কাজ করে—তাহলে কি “আমাদের” বিজ্ঞান শুধু আমাদের মহাবিশ্বের জন্যই প্রযোজ্য?
মাল্টিভার্স, ইউনিভার্স, প্যারালাল ইউনিভার্স, টাইম ট্রাভেল, ইভেন্ট হরাইজন, ব্ল্যাক হোল, বিগ ক্রাঞ্চ, গ্র্যাভিটেশনাল সিঙ্গুলারিটি, এবং আলোকবর্ষ—এই সমস্ত ধারণা একত্রে আজকের আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ও চ্যালেঞ্জিং অধ্যায়গুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত।
বিজ্ঞান বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে সময় এবং স্থানকে কেবল পর্যবেক্ষণযোগ্য বাস্তবতার গণ্ডিতে আটকে না রেখে বহু মহাবিশ্বের (Multiverse) ধারণার দিকেও দৃষ্টি দিচ্ছে। মাল্টিভার্স তত্ত্ব অনুযায়ী, যেহেতু আমাদের মহাবিশ্ব ব্যাতিত অন্য মহাবিশ্ব থাকতে পারে এ ধারনা অলরেডি স্টাব্লিসড , তো এরকম হতেই পারে যে , আলাদা আলাদা মহাবিশ্ব এর ভৌত নিয়মাবলী তে ভিন্নতা থাকতেই পারে এবং সম্ভবনাটা খুব বেশিই। এই ধারণাগুলোর সঙ্গে টাইম ট্রাভেল (Time Travel) বা সময়ভ্রমণের ধারণাও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুযায়ী (Theory of General Relativity), সময় হলো একটি গতিশীল মাত্রা, যা গতি ও মহাকর্ষের প্রভাবে সঙ্কুচিত বা সম্প্রসারিত হতে পারে। এই সূত্র থেকেই ব্ল্যাক হোল (Black Hole) ও ইভেন্ট হরাইজন (Event Horizon)-এর মতো গঠনগত ধারণা এসেছে, যেখানে সময় প্রায় থেমে যেতে পারে এবং আলো পর্যন্ত পালাতে পারে না। তাই, বিজ্ঞানীরা আজ টাইম ট্রাভেলের সম্ভাবনা নিয়ে গাণিতিক মডেল তৈরি করছেন।
তবে এখনো পর্যন্ত টাইম ট্রাভেল বাস্তবে সম্ভব হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—যদি টাইম ট্রাভেল সম্ভব না-ই হয়, তাহলে বিজ্ঞানীরা এত এত দূরত্ব মাপ—যেমন ১০০ আলোকবর্ষ, ১ লক্ষ আলোকবর্ষ, এমনকি ১৩.৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্ত—পরিমাপ করে লাভ কী?
এর উত্তর হতে পারে: বিজ্ঞান কেবল গন্তব্য নয়, এটি একটি পথ। এই দূরত্ব মাপের মাধ্যমেই আমরা মহাবিশ্বের বয়স, গঠন ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা পাই। যেমন, বিগ ব্যাং (Big Bang) তত্ত্ব এবং এর বিপরীতধর্মী ধারণা—বিগ ক্রাঞ্চ (Big Crunch)—এই সকল ধারণা উন্নত হয়েছে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ও মহাকর্ষীয় টান বোঝার মাধ্যমে।
আসলে, এই পথচলা এখনও মূলত কয়েকজন মৌলিক চিন্তাবিদের সূত্রেই গঠিত—আইজ্যাক নিউটন (Isaac Newton), আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein), স্টিফেন হকিং (Stephen Hawking), ও ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক (Max Planck)-এর মতো মনীষীদের তত্ত্বই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি। কিন্তু মাল্টিভার্স ধারণা আমাদের সেই ভিত্তিগুলোকেও নতুন আলোকে পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানাচ্ছে, কারণ যদি ভিন্ন মহাবিশ্বে ভিন্ন ধরনের পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র কাজ করে—তাহলে কি “আমাদের” বিজ্ঞান শুধু আমাদের মহাবিশ্বের জন্যই প্রযোজ্য?
এই প্রশ্নগুলোই ভবিষ্যতের বিজ্ঞানকে নতুন গন্তব্যের দিকে ধাবিত করছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে টাইম ট্রাভেল কোনো কল্পনা নয়, বাস্তব প্রযুক্তির অংশ হয়ে উঠবে।
তথ্যসূত্র:
Stephen Hawking, A Brief History of Time
Brian Greene, The Hidden Reality: Parallel Universes and the Deep Laws of the Cosmos
Albert Einstein, General Theory of Relativity (1915)
NASA: Black Holes
Max Planck Institute for Gravitational Physics: Gravitational Singularities and Quantum Gravity
Sean Carroll, From Eternity to Here: The Quest for the Ultimate Theory of Time
Kip Thorne, Black Holes and Time Warps: Einstein's Outrageous Legacy
22 ঘন্টা পূর্বে
করেছেন
Curious