মানুষের মতোই গাছেরও প্রাণ আছে, আছে অনুভুতি, একথা অজানা নয়। কিন্তু গাছেরাও মানুষের মতোই নিয়ম করে ঘুমায় এবং ঘুম থেকে ওঠে! অবাক করার বিষয় হলেও সত্যি।
সারাটা রাত ঝিমানোর পর ভোরের আলো ফুটলে দিনের কোন সময় কীভাবে ঘুম ভাঙে গাছেদের, শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই, খাওয়াদাওয়ার তোড়জোড়, মহাকাশ থেকে এই প্রথম তা দেখিয়েছে নাসার ‘ইকোসিস্টেম স্পেসবোর্ন থার্মাল রেডিওমিটার অন স্পেস স্টেশন’ বা ‘ইকোস্ট্রেস’।
গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের মতো গাছেরাও কেউ কেউ ‘আর্লি রাইজার’। কেউ বা আবার ‘লেট লতিফ’। সকালে গাছেরা আগে জেগে উঠবে নাকি পরে, সেই অভ্যাসটা নির্ভর করে তারা কোন এলাকায় বসবাস করছে তার উপর। কোনও একটি এলাকায় গাছেরা সকলেই ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠে যায়, আবার কোনও কোনও এলাকার গাছেদের তুলনামূলক দেরিতে ঘুম ভাঙ্গে।
২০১৮ সালের জুনে ইকোস্ট্রেসকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠায় নাসা। মহাকাশ থেকে আমেরিকা ও কানাডার সীমান্তের সুবিশাল হ্রদ ‘লেক সুপিরিয়র’-এর আশপাশের এলাকায় নজর রেখেছিল ইকোস্ট্রেস।
সেখান থেকেই ইকোস্ট্রেস দেখেছে, লেক সুপিরিয়র আর তার আশেপাশের এলাকাগুলির গাছেদের ঘুম ভাঙে সবার আগে। সকাল ৭টার দিকে। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ঋতুতেই এমনকি নিয়মিতভাবেই ঘুম ভাঙ্গে তাদের। আবার, লেক সুপিরিয়র থেকে কিছুটা দূরে থাকা গাছেদের ঘুম ভাঙ্গে সকাল ৮টায়। আর তার চেয়েও দূরে থাকা গাছেদের ঘুম ভাঙে সকাল ৯টার দিকে।
নাসার ‘ইকোস্ট্রেস মিশনে’র অন্যতম সদস্য উদ্ভিদবিজ্ঞানী অশোক দেবনাথ জানান, কাছাকাছি হ্রদ বা জলাশয় থাকলে সকালে গাছেদের তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙ্গে। এমনকি তারা তাড়াতাড়ি নেমে পড়তে চায় বেঁচে থাকার লড়াইয়ে। এছাড়াও যাবতীয় কাজ যেমন খাবার গ্রহণ ও শ^াস-প্রশ^াসসহ প্রাত্যহিক সবকাজেই শুরু হয় তোড়জোড়। আবার জলাশয় থেকে দুরে থাকা গাছেদের ক্ষেত্রে ঘটে বিলম্ব।
তবে রাতে মানুষের মতো পুরোপুরি ঘুমায়না গাছেরা। বলা যেতে পারে, রাতে গাছ ঝিমায়। অনেকটা মানুষের মতো তন্দ্রাচ্ছন্নতা। এছাড়াও অ্যালার্ম ঘড়ির মতো গাছেদের শরীরেও আছে একটি ঘড়ি। যাকে বলা হয়, ‘প্ল্যান্ট সারকাডিয়ান রিদম্স’ বা উদ্ভিদের দেহের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি। যা আসলে এক ধরণের কম্পন। যেটি তৈরি হয় গাছের ভিতরেই। সেই ঘড়িই গাছকে জানিয়ে দেয়, এবার ঘুম থেকে জেগে ওঠো! আর তার পরপরই গাছেরা জেগে ওঠে, ফুল সৌরভ ছড়ায়, চঞ্চল আর চকচকে হয়ে ওঠে গাছের পাতারা। শাখায় শাখায় মুকুল আসে। আবার এই অ্যালার্ম ঘড়িই গাছেদের জানিয়ে দেয়, বেলা পড়ে আসছে বা রাত নেমে আসছে!